দেশে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় সেই তুলনায় কমছে। ফলে কয়েক মাসের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত বছরের অগাস্টে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। আমদানি ব্যয় বাড়ায় গত ৯ মে রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ১১ বিলিয়ান ডলার। এ রিজার্ভ থেকে ১০ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) প্রায় ২২৪ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। এরপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে যে রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। গত বছরের অগাস্টে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ (৪৮ বিলিয়ন ডলার) ছিল বাংলাদেশের।
এদিকে, গাড়িসহ বিলাসী পণ্যের আমদানিতে ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়ে যাতে আমদানি ব্যয় পরিশোধে কেউ ব্যর্থ না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ডলার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০২ কোটি। এর বিপরীতে বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক অর্থবছর এত পরিমাণ ডলার এর আগে বিক্রি হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৩ সালের জুন শেষে রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়। ওই সময়ে রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের অগাস্টে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। তবে গত কয়েক মাসে ধরে ধারাবাহিক ভাবে রিজার্ভ কমছে। গত ০৮ মে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৪৩ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলারে। ১০ মে ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের আকু পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে আসে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার মূল কারণ হিসেবে আমদানি ব্যয়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে রেমিট্যান্স কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ ব্যাপক ভাবে পরিশোধ শুরু হলে রিজার্ভে চাপ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
এর আগে গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে আমদানি ব্যয় ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে ছয় হাজার ১৫২ কোটি ডলার হয়েছে। একই সময়ে রপ্তানি ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে তিন হাজার ৬৬২ কোটি ডলার হয়। ওই সময়ে রেমিট্যান্স ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে এক হাজার ৫৩০ কোটি ডলারে নেমে আসে। এতে চলতি হিসাবে রেকর্ড এক হাজার ৪০৭ কোটি ডলারের ঘাটতি দেখা দেয়। তবে বিদেশি ঋণ বাড়ায় সামগ্রিক ঘাটতি হয়েছে ৩১০ কোটি মার্কিন ডলার।
গত অর্থবছর বিভিন্ন ব্যাংকের হাতে উদ্বৃত্ত ৭৯৪ কোটি ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও একের পর এক রেকর্ড হতে থাকে। তবে আমদানি ব্যয় পরিশোধে কেউ যেন ব্যর্থ না হয়, এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে।
গত ১০ মে দুই কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০২ কোটি ডলার। বিপরীতে বাজার থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি এসেছে।
উদ্বৃত্তের চাপ কমাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মোট ৭৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ। এর বিপরীতে বিক্রি করেছিল মাত্র ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনেছিল ৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ওই সময়ে বিক্রি করেছিল ৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন ডলার না কিনলেও সে সময়ে ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছিল। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছর বিক্রি করেছিল ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের বর্তমান সময়ে প্রতি ডলারে এক টাকা ৯০ পয়সা বাড়িয়ে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। আর নগদ ডলার (খোলা বাজার) কিনতে ব্যয়ে করতে হচ্ছে ৯৩ টাকা পর্যন্ত।
-এমএ