‘মিথ্যাবাদী বাবা কথা দিয়ে কথা রাখে না’
Published : Sunday, 1 May, 2022 at 12:33 PM Count : 712
ঈদ আসলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ করে শিশুরাই। স্বজনদের কাছ থেকে নতুন কাপড়, ঈদ সালামি আনন্দ-উল্লাসেই সময় কাটায় ঈদের দিন। বরগুনার চার জেলে পরিবারের শিশুদের ঈদ এখন আর উৎসব হয়ে ওঠে না। তাদের কাছে ঈদের দিন এখন অন্য ১০ দিনের মতোই সমান। কারণ সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ তাদের পিতা। তাই তাদের না আছে পিতা, না আছে নতুন জামা, নেই কোনো ভালো খাবারের ব্যবস্থা।
২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র তাণ্ডবে ১৫ জেলে নিয়ে সাগরে ডুবে যায় এফবি তরিকুল নামের ট্রলারটি। এ ঘটনায় নিখোঁজের দশদিন পর ১১ জেলে ফিরে এলেও ফিরে আসেনি বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লালু পাড়া গ্রামের রাসেল ও দেলোয়ারসহ চার জেলে।
রোববার রাসেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, করুণ চিত্র। তিন মেয়ে নিয়ে ভাঙাচোরা ঘরে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে রাসেলের পরিবারের। রাসেলের স্ত্রী অজুফা তিন কন্যাসন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। অজুফার প্রায়ই দুচোখ বেয়ে পড়ে অশ্রু।
নিখোঁজ রাসেলের বড় মেয়ে জান্নাতি (১৪) লাউপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী, মেজ মেয়ে মাহফুজা (৮) ও নাইমার সাড়ে চার বছর। নাঈমার কাছে বাবা মানে আবছা ছায়া। নাইমা জানে, বাবা সাগর থাকে। কিন্তু তাদের দেখতে আসে না। বিধির জটিল সমীকরণ থেকে দূরে থাকা ছেট শিশু দুটিই অপেক্ষা নিয়ে মনে মনে ভাবে, বাবা ফিরবেন, তাদের জড়িয়ে ধরবেন গভীর মমতায়। নিয়ে আসবেন নতুন জামা আর মজাদার খাবার। কিন্তু সময় পেরিয়ে যায়, আসে না ওদের বাবা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বছরে দু-একবার মাঝে মাঝে যে সাহায্য করেন তা দিয়ে কোনো রকমে ৩ মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে অজুফার। বর্ষার সময় ঘরের চালা থেকে বৃষ্টি পড়ে। আর বৃষ্টি হলেই সন্তানদের নিয়ে বসে থাকতে হয়। তাই কোনো রকম ঘরের চালায় পলিথিন দিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন রাসেলের স্ত্রী।
রাসেলের স্ত্রী অজুফা বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছাড়া কিভাবে আর বেঁচে থাকি বলেন। স্বামী সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজ জেলে হিসেবে সরকারি কোনো সাহায্য পাইনি। বৃষ্টি হলেই ঘরের এক কোণে তিন সন্তান নিয়ে বসে থাকি আর আল্লাহকে ডাকি। সন্তানরা কিছু চাইলেই তিনি আল্লার কাছে চান। কারণ আল্লাহ ছাড়া কে আছে তার। দুই বছর ধরে সন্তানদের না দিতে পারেন নতুন জমা। না খাওয়াতে পারেন ভালমন্দ কিছু খাবার। শিশু নাইমার কাছে বাবা মানে মিথ্যাবাদী, কথা দিয়ে কথা রাখে না। আর নতুন জামা ও মজা নিয়েও আসে না। নতুন জামা নিয়ে আসে শুধু চাচ্চুরা বাবা আর আসে না!
শুধু রাসেলের পরিবার নয়, এমন কষ্ট নিখোঁজ জেলে দেলোয়ারের ঘরে। বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর লেখাপড়া বন্ধ রাজিবের (১২)। লেখাপড়া করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও এখন সে গরুর রাখাল। দেলোয়ারের ছোট মেয়ে কারিমাও (৭) অপেক্ষা করছে বাবা ফিরে আসার অপেক্ষায়।
এইচএম/এনএন