For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

অটোরিকশাচালকের আড়ালে ডাকাত চক্রের মূলহোতা রাজা মিয়া

Published : Tuesday, 5 April, 2022 at 6:45 PM Count : 167

রাজা মিয়া।বাস কন্ডাক্টর থেকে অটোরিকশাচালক। অটোরিকশা চালানোর আড়ালে ডাকাতির উদ্দেশে বিভিন্ন মার্কেটে রেকি করাই ছিল তার কাজ।

র‍্যাব জানায়, ২০০২ সালের দিকে সংঘবদ্ধ চক্রটির সাথে রাজা মিয়ার সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেই থেকেই অপরাধে জগতে তার প্রবেশ। শুধু তাই নয়, রাজা মিয়া একজন দক্ষ তালা-চাবির মেকার। তিনি অর্ধশতাধিক চুরি/ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন।

র‍্যাব আরো জনায়, ২০১৪ সালে মিথ্যা পরিচয়ে জয়পুরহাট শাখার ব্র্যাক ব্যাংকের পাশের একটি ঘরে এনজিওর নামে ভাড়া নিয়ে ঐ ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা লুট করে এই চক্র। 

লুটের কৌশল তুলে ধরে র‍্যাব জানায়, ভল্ট লুটের ১ সপ্তাহ আগে থেকে স্কু ড্রাইভার ও শাবল দিয়ে দেয়াল কেটে ব্যাংকের ভল্টে ডুকে ঐ টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে র‌্যাবের অভিযানে রাজা মিয়াসহ ৭ জন গ্রেফতার হয়। ঐ ঘটনায় রাজা মিয়া ৩ বছর কারাভোগ করে। একইভাবে তারা ২০১৪ সালে সিদ্ধিরগঞ্জে দুইটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে ৪৫৫ ভরি স্বর্ণ ও ২ লক্ষ টাকা লুট করে। পরবর্তীতে র‌্যাবের অভিযানে তারা ৩ জন গ্রেফতার হয় এবং কারাভোগ করে।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) র‍্যাব সদর দপ্তর থেকে এক ভিডিও বার্তায় র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব  জানান।

তিনি বলেন, প্রায় এক যুগ যাবৎ বিভিন্ন ছদ্মবেশে ব্যাংক ডাকাতি ও স্বর্ণালংকার লুটকারী  চক্রের মূলহোতা রাজা মিয়াসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলায় রাঙাপরী জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকান থেকে প্রায় ৩০০ ভরি স্বর্ণ লুটের একটি দুর্ধর্ষ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ ও বরিশালে অভিযান পরিচালনা করে এ ঘটনার মূলহোতা মো. রাজা মিয়া (৫৪), সহযোগী মো. কাউসার হোসেন ওরফে বাচ্চু মাস্টার (৪২) ও মো. মাসুদ খানকে (৪২) আটক করা হয়।

উদ্ধার করা হয় লুটকৃত ১৯.৭০ গ্রাম স্বর্ণ ও নগদ ৩ লাখ ২৯ হাজার ১৮০ টাকা। এ ঘটনায় রাজা মিয়া দোকানে লুটের পরিকল্পনা করে এবং লুটের সময় স্বর্ণের দোকানে শার্টারের তালা ভাঙার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ইতোপূর্বে তার নামে চুরি ও ডাকাতি সংক্রান্ত ২টি মামলায় কারাভোগ করেছেন। 

চক্রটির অপরাধের ধরণ বিশ্লেষণ তুলে ধরে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা প্রথমে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদপত্র ইত্যাদি ব্যবহার করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তাদের লক্ষ্যবস্তু দোকানসমূহে মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে যোগদান করে বা দোকান ভাড়া নেয়। পরবর্তীতে স্বর্ণালংকার লুট করার পর তারা আত্মগোপনে চলে যায় ও নিজেদের মধ্যে সর্বপ্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা কিছুদিন পর নতুন লক্ষ্যবস্তু ঠিক করার জন্য পুনরায় যোগাযোগ করে। 

গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায় যে, তারা ২০২০ সালে চুরির দুই মাস পূর্বে এই চক্রের ৩ সদস্য মিথ্যা পরিচয়ে মার্কেটে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে যোগ দিয়ে ডেমরার হাজী হোসেন প্লাজায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে ২৩০ ভরি স্বর্ণ ও ১.৫ লক্ষ টাকা লুট করে। 

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায় যে, তারা সংঘবদ্ধ ব্যাংক ডাকাতি ও স্বর্ণালঙ্কার লুট চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই বিভিন্ন পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন যাবৎ পারস্পারিক যোগসাজসে দেশের বিভিন্ন স্থানের স্বর্ণের দোকান লুট, ব্যাংক ডাকাতি ও বিভিন্ন মার্কেটে লুট করে আসছে। 

গ্রেফতারকৃত মাসুদ তাদেরকে রাত ১টার দিকে মার্কেটে আসতে বলে। এই সময়ের মধ্যে গ্রেফতারকৃত মাসুদ মার্কেটের অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীদের কৌশলে খাবার ও পানীয়ের সাথে চেতনানাশক সেবন করিয়ে তাদের অজ্ঞান করে। পরিকল্পনা মোতাবেক অন্যান্যরা মার্কেটের সামনে আসলে মাসুদ ও তার এক সহযোগী গেটের তালা খুলে তাদেরকে কাউসার এর ভাড়াকৃত দোকানের ভিতর নিয়ে যায়। কাউসার মাস্টার ও তার এক সহযোগী মার্কেটের বাইরের চারপাশ নজরদারিতে থাকে। 

পরবর্তীতে রাত আনুমানিক ২টার দিকে কাউসার মাস্টারের দোকান হতে পূর্ব থেকে মজুদ করে রাখা তালা ভাঙার যন্ত্রপাতি দিয়ে দুটি দোকানের তালা এবং শাটার ভেঙে রাজা মিয়াসহ আরও ২/৩ জন দোকানের ভিতর প্রবেশ করে।

দোকানের ভিতর থাকা স্বর্ণলংকার ও নগদ টাকা লুট করে তাদের ভাড়াকৃত দোকানে নিয়ে যায়। ঘটনা চলাকালীন সময়ে মাসুদ দোকানের বাহিরে পাহারা দেয়। দোকানে যে স্বর্ণালঙ্কার লুট হয়েছে তা যেন আগে থেকে না বুঝা যায় সে জন্য তারা দোকানে নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। অতঃপর ভোরে লুটকৃত মালামালসহ কেরানীগঞ্জে কাউসার মাস্টারের পূর্ব থেকে ভাড়াকৃত বাসায় চলে যায়। 

গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায় যে, ঘটনার দিন সকালেই তারা লুটকৃত স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা, নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে তাদের গ্রামের বাড়ি চলে যায়। 

গ্রেফতারকৃত কাউসার মাস্টার সকল প্রকার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে রাজধানীর মিরপুরের একটি সিকিউরিটি এজেন্সির নাম ব্যবহার করে মাসুদকে রজনীগন্ধা মার্কেটে সিকিউরিটি গার্ড এ চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই তারা বিভিন্ন সময়ে মার্কেটের সিকিউরিটিসহ অন্যান্য বিষয়ের খোঁজ খবর নিতে থাকে এবং স্বর্ণের দোকান লুটের পরিকল্পনা করতে থাকে। রাজা মিয়া তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাউসারের ভাড়াকৃত দোকানে নাম সর্বস্ব মালামাল রেখে কৌশলে লুটের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি মজুত করে।

গ্রেফতারকৃত কাউসার হোসেন মাধ্যমিক সম্পন্ন করে আরআরএমপির একটি প্রকল্পে চাকরি নেয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সাল হতে ঢাকায় এক আইনজীবীর অফিস সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে। ২০১৮ সালে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতি ও স্বর্ণালঙ্কার লুট চক্রের এক সদস্য আদালতে আসলে সেখানে কাউসারের সাথে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০১৮ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের স্বর্ণালঙ্কার লুটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে।
 
গ্রেফতারকৃত মাসুদ ঢাকার চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে ক্লিনার ও বয় হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। 

এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,