For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

মুকুলে ঠাসা আম গাছ, সর্বত্র বাম্পার ফলনের আশা

Published : Saturday, 19 March, 2022 at 12:03 PM Count : 91

মুকুলের ভারেই যেন ভেঙ্গে পড়বে আমের ডাল। মুকুলে ঠাসা আম গাছ হঠাৎ দেখলে এমন ভয়ও জাগতে পারে। কিন্তু এ ভয়ের আড়ালে যে সুখবর হাসে। 

নওগাঁনিয়ামতপুরে এখন যেদিকে চোখ যায় শুধু মুকুল আর মুকুলের অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য। পাগল করা মুকুলের গন্ধ আবহমান বাংলার স্বর্গীয় রূপ মেলে ধরেছে নিয়ামতপুরে। এতে দারুণ আশাবাদী আম চাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। 

তাদের আশাবাদ, আমের ফলন এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ইতিমধ্যে কোন কোন গাছে মুকুল ঝড়ে আমের গুটি আসতেও দেখা গেছে। 

অন্যদিকে, আমের তৃতীয় স্থান অর্জনকারী জেলার নিয়ামতপুর উপজেলায় বেড়েই চলেছে আমের চাষ। গত কয়েক বছর ধরে নিয়ামতপুরে অব্যাহত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে আম চাষ। 
এক হিসাবে মতে, গত আট বছরে নিয়ামতপুরে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে তিন গুন। সেই সঙ্গে উৎপাদনও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।

এবারও আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে রেকর্ড পরিমাণে। তাই উৎপাদনেও স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এ বছর। চলতি বছর নিয়ামতপুরে আম চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। আর আম উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৬০ মে. টন। এটিও স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা। তবে আম গাছে যে পরিমাণ মুকুল এসেছে, তাতে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদন হবে বলেও আশা করছে কৃষি বিভাগ। 

নিয়ামতপুরে আমকে কেন্দ্র করে আজ পর্যন্ত কোন আড়ৎ না হওয়ায় চাষিরা বেকায়দায় পড়েছেন। পোরশা, রাজশাহী, নওগাঁ সদর, সাপাহারে আম বিক্রির জন্য গেলে চাষিরা নায্য দাম পান না। তার উপর অতিরিক্ত পরিবহন খরচ পড়ে যায়। চাষিদের প্রাণের দাবি, নিয়ামতপুরে আমের আড়ৎ যেন হয়।

এছাড়া, নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার এলাকায় আমসহ বিভিন্ন সবজি সংরক্ষণের জন্য কোল্ড ষ্টোরেজ একান্ত প্রয়োজন।

নিয়ামতপুরে প্রায় শতাধিক জাতের আম উৎপন্ন হয়। তবে এবার ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালিভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লক্ষনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়েছে। গাছে গাছে বাহারী জাতের আম এখন দেশের কোটি কোটি মানুষের রসনা মেটাতে প্রস্তুত হচ্ছে। সব ভেবে চাষিদের মনে উঁকি দিচ্ছে মুনাফার আগাম বার্তা। গাছের মুকুল কীটপতঙ্গের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। 

আম চাষি আব্দুর রহিম বলেন, আম গাছে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ, সার ও সেচ প্রদানসহ গাছের পরিচর্যা ছাড়া চাষিদের এখন অন্য কিছু করার ফুসরত নেই। মুকুলে ডায়াথেন এম ও কনফিডর পরিমাণমত পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে, যেন মুকুলে কোন ধরনের পোকার আক্রমণ না হয়। আবার গুটি ধরার পর আরেক দফা স্প্রে করা হবে।

ভীমপুর গ্রামের মো. শহিদুজ্জামান তরফদার কাজল বলেন, আমার ১৫ বিঘা আম্রপালী গাছের বাগান রয়েছে। তিন বছর মেয়াদী লিজ দেওয়া রয়েছে। তিন বছরে ১৫ লক্ষ টাকা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছে। কয়েকদিন ধরে নিয়ামতপুরসহ আশপাশে কুয়াশা দেখা দিচ্ছে। এতে মুকুল ও আম গাছের কিছুটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই মুহুর্তে শিলা বৃষ্টি হলে আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তাই আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে বর্তমানে শঙ্কিত রয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবার বাম্পার ফলন হবে।

নিয়ামতপুর গ্রামের চাষি গোলাম মর্তুজা বলেন, পাঁচটি আম বাগান রয়েছে। এবার গাছে ভালো মুকুল হয়েছে। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি না হয় তাহলে আশানুরুপ ফলন পাব। আশা করছি দামও ভালো পাব।

আরেক চাষি হাজিনগর ইউনিয়নের মোহাম্মাদপুর গ্রামের এ্যাডভোকেট আব্দুল আলিম বলেন, আমার ৫০/৬০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। বেশির ভাগই আম্রপালী জাতের। কিছু ল্যাংড়া গাছ রয়েছে সেগুলোর মাথা ছেঁটে দেওয়া হেয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী আমি বাগানে সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছি। এবার মুকুল খুব ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও ভালো আশা করছি। মুকুল থেকে আম ফুটে বের হলে বাগান বিক্রি করে দেই। এতে ভালোই লাভ হয়। মুকুল পুরো ফোটার আগে গাছে ডায়াথন এম ও কনফিডর পরিমাণমত পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করেছি, যেন মুকুলে কোন ধরনের পোকার আক্রমণ না হয়। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমীর আব্দুল্লাহ মো. ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, এ বছর নিয়ামতপুরে ৬৬৫ আম বাগানে এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আম গাছে শতভাগ মুকুল এসেছে। আগামী দিনগুলোয় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এখান থেকে প্রায় ১৩ হাজার ৬৬০ টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, গাছে কোন পোকার আক্রমণ দেখা দিলে নির্ধারিত মাত্রানুযায়ী কীটনাশক দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এবারে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আম উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। বর্তমানে উপজেলায় আম নিয়ে কোন সমস্যা নেই। ভবিষ্যতেও যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া আর কোন সমস্যা না হয় সে দিকে আমরা সবসময় নজর দিচ্ছি। এছাড়া নিরাপদ আম উৎপাদনের জন্য ফল ব্যাগিং এবং ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সফিউল ইসলাম বলেন, আমরা মাঠে মাঠে চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে থাকি। আমাদের তেমন কোন উপজেলায় কোন সমস্যা নেই।

-টিএইচ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,