সমালোচনার মুখে অবশেষে স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আমির হামজার নাম। সাহিত্যে অবদানের জন্য তার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
শুক্রবার পুরস্কারের তালিকা থেকে আমির হামজার নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর আগে গত ১৫ মার্চ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১০ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। তাতে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয় প্রয়াত আমির হামজাকে।
আমির হামজাকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননায় ভূষিত করায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে আমির হামজা মারা যান। বলা হচ্ছে, আমির হামজা একজন মরমী গায়ক, গান লিখেছেন। তার তিনটি বই প্রকাশিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
২০১৮ সালে মাগুরার শ্রীপুরের সারথি ফাউন্ডেশন থেকে ‘বাঘের থাবা’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। পরে ২০১৯ সালে এই বইয়েরই গান অংশ নিয়ে বের হয় আরেকটি বই, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’। এছাড়া ‘একুশের পাঁচালি’ নামেও তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
মরণোত্তর পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক আমির হামজার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে। ওই গ্রামসহ সারাজেলার মানুষের কাছে তিনি পালাগানের শিল্পী কিংবা কবি হিসেবে পরিচিত।
এবার যারা স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন
‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে এবার ৬ জন স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন-বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম), আব্দুল জলিল, সিরাজ উদদীন আহমেদ, মরহুম মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস এবং মরহুম সিরাজুল হক।
‘চিকিৎসাবিদ্যা’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম। ‘স্থাপত্যে’ মরহুম স্থপতি সৈয়দ মঈনুল ইসলাম স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ ক্ষেত্রে পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট।
এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা, আঠারো ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা, ও একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হবে।
এর আগে সাহিত্যে অবদানের জন্য আমির হামজার নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তাকে দেশের সাহিত্যাঙ্গন কিংবা নাগরিক সমাজের কেউ চেনে না। তবে তিনি স্থানীয়ভাবে পালাগান রচনা ও গাইতেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। তার ‘বাঘের থাবা’, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ নামে দুটি বইয়ের কথা জানা যায়, যা বছর দুয়েক আগে তার ছেলে উপসচিব আসাদুজ্জামানের উদ্যোগে প্রকাশিত হয়। প্রথমে ‘বাঘের ধাবা’ নামে একটি বই স্থানীয় একটি সংগঠনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। পরে বইয়ের গানের অংশ নিয়ে ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ বাইটি প্রকাশ করা হয় ঢাকার অন্যপ্রকাশ থেকে। আসাদুজ্জামান বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য বাবা আমির হামজার নাম প্রস্তাব করেন আসাদুজ্জামান। আর তাতে সুপারিশ করেন একজন সিনিয়র সচিব।
আমির হামজার নাম স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ঘোষিত হওয়ার পর দেশজুড়ে বিপুল সমালোচনা ওঠে। খোঁজ নিতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে- ১৯৭৮ সালে একটি খুনের ঘটনায় ওই মামলার আসামি ছিলেন আমির হামজা। পরে মামলার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তার। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি সরকারের সাধারণ ক্ষমায় কারামুক্ত হন।
আমির হামজাকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, আমির হামজার মনোনয়ন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা ও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আমির হামজা ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। তিনি ‘বাঘের থাবা’বইটি দেখে যেতে পেরেছেন
এনএন