‘মোর হাদিস বাবার লাশ কোথায়’
Published : Wednesday, 9 March, 2022 at 10:12 PM Count : 180
‘মোর বাজান গেলা কই। ও বাজান তুমি কোমনে আছো। ও বাবারা তোমরা মোর হাদিস বাবার লাশ লইয়া আইলা না ক্যা। মোর সব শেষ অইয়া গেল। বাবার একটু লাশ দেখতে পারলেই পরাণডা জুড়াইত। বুধবার দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এভাবে সন্তানের লাশের জন্য আহাজারি করেন ইউক্রেনে নিহত ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফের মা আমেন বেগম।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮ নাবিকের দেশে ফেরার উচ্ছ্বাস। সেই সময় নিহত হাদিসুরের মা আমেনা বেগমের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বিমানবন্দরের পরিবেশ। হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনার আকুতি বাবা-মা-ভাইয়ের। ২৮ নাবিকের সাথে হাদিসের লাশ আসবে এমন আশা নিয়ে হাদিসের বাবা আব্দুর রাজ্জাক দুই ভাই তরিকুল ইসলাম, গোলাম মাওলা প্রিন্স এবং বোন সানজিদা আক্তার সম্পার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবার এখন তাকিয়ে আছে সরকারের সহায়তার দিকে। যেই ভাইয়ের দেখানো স্বপ্নে এতটা পথ পাড়ি দেওয়া, তার অকালপ্রয়াণে যেন দুঃস্বপ্নে নেমে এসেছে অনার্স পড়ুয়া দুই ভাইয়ের জীবনে। সব আশা হারিয়েও ফেরাতে চান ভাইয়ের মরদেহ। আর জমি বিক্রি করে ছেলেকে লেখাপড়া শেখানো বাবার সংসারের হাল ধরে ছিলেন হাদিসুর। সুদিন ফিরেছিল তবে টিকতে দিল না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দাবানল। আর জমি বেঁচে ছেলেকে লেখাপড়া শেখানো বাবার সংসারের হাল ধরে ছিলেন হাদিসুর। সুদিন ফিরেছিল তবে টিকতে দিল না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দাবানল। তবে এখন তারা তাকিয়ে আছেন সরকারের সহায়তার আশায়।
ইউক্রেনে ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলায় গত ২ মার্চ বরগুনার বেতাগীর হোসনাবাদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাওলাদার বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ও আমেনা বেগমের জ্যেষ্ঠ ছেলে মো. হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হন। হাদিসুরের লাশ ফিরে পরিবারের সদস্যরা গত ৪ মার্চ ঢাকা আসেন। গত ৬ মার্চ বিকেলে ঢাকা রিপোর্টস ইউনিটির সাগর-রনি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু নৌপরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দ্রুত হাদিসুরের লাশ ফিরে পাওয়াসহ ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।
হাদিসুরের মেজো ভাই তরিকুল ইসলাম জানান, ‘জীবিত ২৮ নাবিকের সাথে ভাইয়ার লাশ হয়ত ফিরে পাওয়ার আশা নিয়ে বিমান বন্দরে গিয়েছিলাম। কিন্তু পেলাম না।’
হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন,‘ সরকার সহায়তা না করলে আমার ছেলে লাশ দেশে আনা সম্ভম নয়। আমি সরকারের লাশের ছেলের লাশটা চাই।’
এসকে/এনএন