রাতের আঁধারে রাসিকের দিঘি ভরাট
Published : Monday, 7 March, 2022 at 9:10 PM Count : 75
মহানগরীর ২২টি পুকুরের মধ্যে সপুরা এলাকায় প্রায় ১০ বিঘা আয়তনের ‘শুকান দিঘি’কেও সংরক্ষিত জলাধার ঘোষণা করেছে রাজশাহী সিটি করর্পোরেশন (রাসিক)। এসব পুকুর সংরক্ষণে রাসিকের প্রকল্প রয়েছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাস্টার প্ল্যানেও দিঘিটি সংরক্ষিত জলাধার। মহানগরীতে পুকুর ভরাট না করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও পুকুর ভরাট চলছে।
মহানগরীর সপুরা এলাকায় অবস্থিত শুকান দিঘি একাধিকবার হাতবদল হয়েছে। তবে বর্তমানে দিঘির প্রকৃত মালিক কে বা কারা? তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এলাকার অনেকে এটির মালিকানা দাবি করে থাকেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছে। দুবছর ধরে সংরক্ষিত পুকুরটি একটু একটু করে ভরাট করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নীরব।
জানা যায়, কিছুদিন বিরতি দিয়ে গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে শুকান দিঘিতে আবার বালু ফেলার কাজ শুরু হয়। খবর পেয়ে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভরাট কাজে বাধা দেয়। পুকুরটি সারারাত পাহারা দিয়ে পুলিশ সকাল ৮টার দিকে চলে আসে। এরপর ভূমিদস্যুরা আবার ভরাটের কাজ শুরু করে। অভিযোগ-পুকুরটি ভরাট করে ৫০ লাখ টাকা কাঠা করে বিক্রির তোড়জোড় চলছে।
শনিবার সকালে শুকান দিঘি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতের টাইলসের ওপর দিয়ে ট্রাক বালু নিয়ে যাচ্ছে পুকুরে ফেলতে। এতে টাইলস ভেঙেচুরে গেছে। পুকুরের উত্তর পাড়ে ফুটপাতে একটি চায়ের দোকান ছিল। কয়েকদিন আগে সেটি গুঁড়িয়ে দিয়ে ট্রাক চলাচলের রাস্তা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে পুকুরের পূর্ব পাড়ের কিছু জায়গা ভরাট করে কলাগাছ লাগানো হয়। সেখানেও রাতে বালু ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, সোহরাব ও সুমন নামে দুই ব্যক্তি শুক্রবার রাতে ভরাট কাজ শুরু করেন। রাসিকের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সোবহান লিটন তাদের সঙ্গে আছেন। কাউন্সিলরের স্ত্রী, ভাই ও ভাতিজা এ পুকুরের কিছুটা অংশের মালিকানা দাবি করে থাকেন। তবে কাউন্সিলর লিটনের দাবি, পুকুরে তাদের কোনো মালিকানা নেই। তিনি নিজেও পুকুরটি রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নানা কারণে পেরে উঠছেন না। যারা ভরাট করছেন, তারা প্রভাবশালী।
শুকান দিঘির সর্বশেষ ক্রেতাদের একজন হিসাবে মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলীর নাম পাওয়া গেছে। রমজান আলী জানান, কয়েক বছর আগে শেলি নামে এক আইনজীবীর কাছ থেকে আমরা ৬ জন গোটা পুকুরটি কিনেছিলাম। কিন্তু দিঘির দখল নিতে গিয়ে ঝামেলা হওয়ায় অন্যজনের কাছে আমরা বেচে দিয়েছি। পুকুরটি কে বা কারা ভরাট করছেন? তা বলতে পারব না। পুকুরটির প্রকৃত মালিক কে? তিনিও তা জানেন না।
শুক্রবার রাতে পুকুর ভরাট শুরু হলে হারুন-আর-রশিদ নামের এক ব্যক্তি থানায় খবর দেন। এ পুকুরের মালিকানা যারা অতীতে দাবি করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে তিনি আইনি লড়াই করে আসছেন। হারুনের দাবি, এ পুকুর তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এর মালিক তাদের বংশের অন্তত ১২ জন। কিন্তু তারা পুকুরটি ভরাট করছেন না। এক কাউন্সিলরের সহায়তায় সুমন ও সোহরাব পুকুরটি দখল ও ভরাট করছেন। তারা ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী। এ দুজনের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কারণ এ দুজনের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
রাতভর পুকুর পাহারা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপির বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, মহানগরীতে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ। এরপরও একের পর এক পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। আর এজন্য পুলিশের ওপর দোষ পড়ছে। অনেকে অভিযোগ করেন, পুলিশ নাকি টাকা খেয়ে পুকুর ভরাটে বাধা দিচ্ছে না। তিনি বলেন, খবর পেলে শুকান দিঘি তো বটেই অন্য কোনো পুকুরই পুলিশ ভরাট করতে দেবে না।
এ বিষয়ে রাসিকের সচিব মশিউর রহমান বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকার ২২টি পুকুর সংস্কার করে সংরক্ষণে একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ তালিকায় শুকান দিঘিও আছে। পুকুরগুলোর কোনোটি সরকারি আবার কোনোটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। প্রকল্পটি পাশ হলে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ব্যক্তিমালিকানার পুকুরও অধিগ্রহণ করা হবে। কিন্তু প্রকল্প পাশ না হওয়ায় তারা এ কাজে হাত দিতে পারছেন না।
-আরএইচ/এনএন