For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

পিয়াসা-মৌ সিন্ডিকেটের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক দম্পতির বিলাসী জীবন

Published : Saturday, 5 March, 2022 at 11:34 AM Count : 418

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া গুলশানের লেকহেড গ্রামার স্কুলের পরিচালক হিসেবে পরিচয় দানকারী মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা গত ০১ আগস্ট তারিখে গুলশানের বাসা থেকে মাদক ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগে গ্রেফতার হন।

একই রাতে মৌকে মোহাম্মদপুরে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারের পর পিয়াসা ও মৌয়ের করা ভিডিও ক্লিপগুলো জব্দ করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। 

তাদের গ্রেফতারের পর উঠে আসে এসব অপকর্মের সঙ্গী চট্টগ্রামের তানজিনা ইসলাম জেনি ও রুবায়েত খান দম্পতি চক্রের নাম। পিয়াসা ও মৌ এর মদ ও অশ্লীল নাচের আসরের ছায়াসঙ্গী ছিলেন এই দম্পতি। 

ব্যক্তিগত ভাবে রুবায়েত নিজেকে গাড়ি ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও প্রকৃত পক্ষে তার নিজের কোন ব্যবসা নেই। সে বাবার গাড়ি ব্যবসায় মাঝে মধ্যে সময় দেয়। তবে এই দম্পতির বেশি সময় কাটতো বলে জানিয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠজন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন নাসিরাবাদ প্রোপার্টিজের প্রগ্রেজ ভ্যালী এলাকায় রুবায়েতের বাবার বাড়িতে থাকেন জেনি-রুবায়েত দম্পতি। প্রায়ই নিজ বাসা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে পার্টির নামে মদ ও ডিজে পার্টির আয়োজন করতো তারা। শুধু তাই নয়, ঢাকায় পিয়াসা ও মৌ এর বাসাসহ নামীদামি হোটেল বারেও বসতো তাদের মদ ও অশ্লীল নাচের আসর। এসব কাজে এই দম্পতির সঙ্গী ছিলেন চট্টগ্রামের আরও চার/পাঁচ জন বড় ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার। 

সরেজমিনে গত ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন নাসিরাবাদ প্রোপার্টিজের প্রগ্রেস ভ্যালিতে গেলে সেখানে তানজিনা ইসলাম জেনি বাসায় নেই বলে জানায় স্বজনরা। পরে মুঠোফোনে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, রুবায়েতের মাধ্যমে পিয়াসার সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে পিয়াসা চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তিনি অস্বীকার করেন। 

তবে জেনি- রুবায়েত দম্পতি ও পিয়াসার ব্যবহৃত ফেসবুক এবং ইন্সট্রাগ্রাম একাউন্ট দেখলে বোঝা যায় তাদের সঙ্গে পিয়াসার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া ওইসব একাউন্টে তাদের একাধিক পার্টির স্থির চিত্র ও ভিডিও রয়েছে। যা তাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে বলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। 

এদিকে, তানজিনা ইসলাম জেনি ও রুবায়েত দম্পতির সোসাল মিডিয়ার এ্যাকাউন্ট ঘাঁটলে দেখা যায়- তাদের রহস্যময় উচ্চ বিলাসী জীবনযাপনের চিত্র। যে ধরনের বিলাসী জীবনযাপন কোন সাধারণ গাড়ি ব্যবসায়ীর পক্ষে করা সম্ভব নয়। 

যার কিছু নমুনা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। রুবায়েতের ব্যবহৃত ঘড়ি ও অন্যান্য পণ্য সামগ্রী মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় তিন কোটি টাকা। 

জেনির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করা ব্যবহৃত পণ্যের মোট দাম দুই লাখ ৯৫ হাজার ৩০০ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই কোটি ৫১ লক্ষ ৫০০ টাকা।  এসব পণ্য পরিহিত অবস্থায় বিভিন্ন সময় জেনি তার ফেসবুক এবং ইনস্ট্রাগ্রাম এ্যাকাউন্টে পোষ্ট করেছেন। একই ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্যের নাম বার বার এলেও প্রতিটি পণ্যই আলাদা আলাদা।

এসব দামি পণ্য কিভাবে তিনি কিনেছেন জানতে চাইলে তানজিনা ইসলাম জেনি বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর টাকায় চলি না, আমার বাবার টাকায় চলি।’

জেনি আরও বলেন, ‘তার বাবার গার্মেন্টস, তেলের পাম্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা আছে।’

সরেজমিনে চট্টগ্রামের ৬২ পূর্ব নাসিরাবাদের জেনির বাবার বাড়ি গিয়ে কথা হয় তার চাচা গোলজার ইসলামের সঙ্গে।

গোলজার ইসলাম বলেন, ‘জেনির বাবা মরহুম মনসুর ইসলাম অনেকদিন আগেই মারা গেছেন। তার ভাবি জেনির মা লুৎফুন্নেসা বেগম ক্যানসারের রোগী। তিনি বর্তমানে শয্যাশায়ী। দুই বোনের মধ্যে জেনি বড়। তার ছোট বোন একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। পাশাপাশি সেই তার মায়ের দেখাশোনা কর।’

তিনি বলেন, ‘তাদের বড় ভাই রিন্টু ইসলাম যখন বেঁচে ছিলেন তখন তাদের পারিবারিক গার্মেন্টেস ব্যবসা ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর আগেই গার্মেন্টস ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে তাদের পারিবারিক আয়ের প্রধান উৎস হলো ৬২ নং পূর্ব নাসিরাবাদের বাড়ির সামনে থাকা দুটি দোকান ঘর ভাড়া যার একটিতে বাগদাদ রেষ্টুরেন্ট এবং অন্যটিতে আছে বারকোড ক্যাফে। এছাড়া একটি পুরাতন পেট্রোল পাম্প যেটার নাম “বাদশা মিয়া পেট্রল পাম্প”। এগুলো থেকে যা আয় হয় তা ভাই-ভাতিজারা ভাগ করে নেন। সেই সূত্রে জেনির মাও তার সংসার খরচ বাবদ কিছু টাকা মাসে মাসে পায়। তবে জেনি বা তার বোন এখান থেকে কোন টাকা পায় না। কারণ হিসাবে বলেন, তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি এখনও ভাগবাটোয়ারা হয়নি। বর্তমানে জেনির মা ও বোন একটি পুরাতন একতলা বাড়িতে থাকেন।’

তবে মাদক ও ডিজে পার্টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রুবায়েত খান বলেন, ‘স্ত্রী জেনির মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হয় পিয়াসার। তারা প্রায়ই বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠিনে যেতেন। তবে সরাসরি পিসায়ার সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ নেই।’

বিলাসী জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করি এবং আমার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করি।’

তবে জেনি-রুবায়েত দম্পতির রহস্যময় বিলাসী জীবনের সঙ্গে তাদের দাবিকৃত আয়ের উৎসের এক শতাংশও মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী তানজিনাকে নিয়ে বিভিন্ন পার্টিতে যেতেন রুবায়েত। সেখানে নিয়মিত মদ ও ডিজে পার্টির আসর বসতো। সেখানে বড়লোকের বউ এবং মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন রুবায়েত। সেই সব পার্টিতে একপর্যায়ে তাদের ছবি তুলে ব্লেকমেইলিং শুরু করতো এই দম্পতি। তাদের সঙ্গী হিসেবে ওইসব পার্টিতে মডেল পিয়াসাও যুক্ত হতেন।

সূত্র আরও জানায়, পিয়াসা নিয়মিত চট্টগ্রামে যাতায়াত করতেন। আর চট্টগ্রামে এলে সাধারণত রাত্রিযাপন করতেন চট্টগ্রাম ক্লাব বা রেডিসনেই। এছাড়া ঢাকার গুলশান-২ এর বিলাসবহুল হোটেল আমারিতে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে রুবায়েতের। ওই হোটেলেও পিয়াসা-মৌ এর সঙ্গে একান্ত সময় কাটাতেন তিনি।

তেমনই একটি পার্টি ছিল চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বেস্ট ওয়েষ্টার্ন হোটেলে। যেখানে জেনি-রুবায়েত দম্পতির সঙ্গে ছিলেন পিয়াসা, সাকিব, জহির, ইশহাক, বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মোবারক আলীসহ তাদের আরও বেশ কয়েকজন বন্ধু (ছেলে-মেয়ে)। 

এ বিষয়ে জহির উদ্দিন বলেন, ‘পিয়াসা আমার বন্ধু। রুবায়েতের মাধ্যমে পরিচয়। একই কথা বলেছেন, সাকিবও। তবে পিয়াসা ও মৌ এর কোন পার্টিতে তিনি কখনো যাননি।’

এদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পিয়াসা-মৌসহ আরও কয়েকটি মামলা পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে সিআইডি সদর দপ্তর তদন্ত করছে।

২০২১ সালের অগাস্টে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘পিয়াসা ও মৌয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। পিয়াসা বারিধারার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। আর মৌ থাকেন মোহাম্মদপুরে। তারা দু'জন একই চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে উঠতি বয়সের ছেলেদের নিয়ে এসে মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে আপত্তিকর ছবি তোলার অভিযোগ রয়েছে। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন এই দুই নারী।’

ডিবির একটি সূত্র বলছে, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সঙ্গে কাজ করেন এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষ সদস্যের তালিকা পেয়েছে পুলিশ। অভিযানে জব্দ করা মুঠোফোনের ভিডিও ক্লিপ ও স্থির ছবি দেখে তাদের আয়োজিত পার্টিতে অংশ নেওয়া প্রভাবশালী ব্যক্তি, শিল্পপতি-বিত্তবান ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে।

দীর্ঘ ছয় মাস পেরুলেও কেন এই চক্রের বাকি সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না?- জানতে চাইলে র‍্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক এম এম ইমরান খান বলেন, ‘আমরা এই চক্রের সদস্যদের বিষয়ে গভীর ভাবে তদন্ত করছি। সময় মতো তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,