তিনি কখনো পুলিশ কর্মকর্তা, কখনো সেনা কর্মকর্তা
Published : Friday, 4 March, 2022 at 10:59 PM Count : 188
কখনো নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা, আবার কখনো পরিচয় দেন সেনাবাহিনীর বড় কর্মকর্তা। শুধু তাই নয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবেও পরিচয় দিতেন নিজেকে। আর এসব উপাধির তকমা লাগিয়ে এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরি দেয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছে ২০ লক্ষাধিক টাকা।
এমন পরিচয়ে এলাকায় ছোট ছোট দোকান থেকে কয়েক হাজার টাকার পণ্য বাকিতে নিয়েছেন। এরপর হঠাৎ কৌশলে এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আশা উদ্দিন (৫০) নামের ওই প্রতারককে ধরে পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার দুপুরে সাভারের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের উত্তর কলতাসূতি মরিচকাটা এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশে দেয় এলাকাবাসী।
আটককৃত প্রতারক আশা উদ্দিন নড়াইলের কালিয়া থানাধীন খররিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শিমুলিয়ার কলেজপাড় এলাকার ফিরোজের বাড়িতে স্ত্রী নার্গিস বেগমসহ ভাড়া থাকতেন।
তিনি এর আগে রাজধানীর বারিধারার ডিপ্লোমেটিক জোনে সিকিউরিটি হিসেবে কাজ করতেন।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানান, আশা উদ্দিন বছর দুয়েক আগে আশুলিয়ার কলেজপাড় এলাকার ফিরোজের বাড়িতে ভাড়ায় উঠেন। এর আগে পার্শ্ববর্তী মরিচকাটা এলাকার খোকনের বাড়িতে ছিলেন। এলাকায় এসেই কৌশলে এলাকার প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং নিজেকে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিতেন। আবার কোন কোন সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবেও দাবি করতেন। কিভাবে যুদ্ধ করেছেন সেই গল্পও শোনাতেন এলাকার চায়ের দোকানে। যাকে যেভাবে বোঝানো দরকার, সেভাবেই গল্প শোনাতেন। এলাকার কয়েকটি দোকান থেকে বাকিতে অনেক জিনিসপত্র নিতেন। সরকারি বড় অফিসার তাই বাকি টাকা সহজেই চাইতেন না দোকানীরা।
ভুক্তভোগী দিলিপ কর্মকার বলেন, তিনি কলেজপাড় এলাকায় জুয়েলারির ব্যবসা করেন। মাঝে মধ্যেই আশা উদ্দিন তার দোকানে আসতেন এবং গল্পগুজব করতেন। একপর্যায়ে নিজেকে পুলিশের বড় অফিসার পরিচয় দিতেন। তার নিজের বাড়ি এখানে আছে বলেও বলতেন। দোকানে মাঝে মধ্যে বসার সুবাদে ছেলেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়া যাবে কি না এমন প্রস্তাব দিলে সাত লাখ টাকা লাগবে বলে জানান আশা উদ্দিন। তার কথা মত তাকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা দেই। কিন্তু দেড় বছর পার হলেও ছেলের চাকরির কোন খবর নেই। বার বার তাগাদা দিলেও সে নানা তালবাহানা শুরু করে। হঠাৎ খবর পাই, তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাকে দেখতে পেয়ে আটক করে পুলিশে খবর দেই। এর আগে গত রাতে এলাকা থেকে মালামাল নিয়ে ট্রাকে করে পালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করেছিলো আশা উদ্দিন।
অপর এক ভুক্তভোগী নূর মোহাম্মদ বলেন, আমার ছেলেকে সরকারি অফিসে পিয়নের চাকরি নিয়ে দেবেন বলে ১০ লাখ টাকা নেন। এছাড়া আরও ৪ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেন। কিন্তু বছর পার হয়ে গেলেও চাকুরি দিতে পারেনি আশা উদ্দিন। বৃহস্পতিবার রাতে লোকমুখে খবর পাই সে ঘরের সকল মালামাল নিয়ে গোপনে পালিয়ে যাচ্ছে। পরে তাকে ধরে তার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। দুপুরে পুলিশে খবর দিলে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
এছাড়া, কলতাসূতি মরিচকাটা এলাকার এক নারীকে ধর্মের বোন বানিয়ে তার কাছ থেকেও পাঁচ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী।
প্রতারক আশা উদ্দিন চাকরি দেয়ার নামে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ বা কোন কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন না। দিলেও কেন তারা মেনেছেন?
আশুলিয়া থানার এসআই মো. তানিম হোসেন বলেন, চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করে টাকা আতসাৎ করেছে এমন অভিযোগে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চাইলে হবে। অথবা উভয়পক্ষ বসে কোন আপোস করলেও করতে পারে। তদন্ত চলছে।
-এআই/এমএ