ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত
ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের বাড়ীতে এখন চলছে শোকের মাতম। আরিফ সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন মাস ছয়েক আগে। তবে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ ছিল তার। সবশেষে গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানিয়েছিলেন,আটকে থাকা জাহাজ ছাড়া পেলে শীঘ্রই বাড়ি ফিরবেন তিনি।
৩ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হয়েছে। স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে এ হামলায় নিহত হন মেরিন প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান আরিফ।
হাদিসুর রহমান আরিফ বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। চার ভাই বোনের মধ্যে হাদিসুর রহমান আরিফ মেঝো। তিনি সম্পর্কে বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকানের চাচাতো ভাই।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন হাদিসুরের মা-বাবা। শোকে মুহ্যমান পরিবারের অন্য স্বজনেরাও। বাড়িতে এখন শুধুই শোকের মাতম। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁরা খবরটা জানতে পারেন। হাদিসুরের মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খুব সকাল থেকেই এ খবরে তার বাড়িতে ভীড় জমাতে শুরু করে মানুষ।
বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘হাদিসুর রহমান আরিফ ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলো। সে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১৮ সাল থেকে ওই জাহাজে ছিল। অবিবাহিত ছেলেটা সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিল মাস ছয় আগে। ’
হাদিসের স্বজনরা জানান, আট বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন জাহাজে চাকরি করেন হাদিসুর রহমান আরিফ। বুধবার জাহাজ থেকে ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্সকে ফোন করেন ইঞ্জিনিয়ার আরিফ। তবে বিকট শব্দের কারণে কিছুই শুনতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে হাদিসুর জাহাজের সামনে বাইরে অবস্থান করায় রকেট হামলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিহত হয়েছেন।
হাদিসুর রহমানের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, গোলার আঘাত হানার সময় বড় ভাই বাইরে এসে মুঠোফোনে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে কথার এক পর্যায় হঠাৎ করে একটি গোলা এসে পড়ে জাহাজটিতে। বিকট শব্দের পর আর কিছুই শুনতে পাইনি এবং কোন কথা হয়নি।
হাদিসুর রহমানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন,‘বাড়িতে এসে ছেলের ঘরের কাজ ধরার কথা ছিল, ছিল বিয়ের কথাও। এখন সব কিছুই শেষ। আমি সন্তানের লাশ দেখতে চাই।
মা আমেনা বেগম বাকরুদ্ধ। কথা বলতেই সে বারং বার মুর্ছা খাচ্ছে আর বুক থাপরাচ্ছে। বলতে গিয়েও কিছুই বলতে পারছে না।
হাদীসের চাচাতো ভাইর ছেলে জসিম উদ্দীন বলেন, হাদীস খুব ভাল ছেলে ছিলো। বাড়ীতে আসলে সে সকল আত্মীয় স্বজনের খোঁজ নিতো। তাকে আমরা কখনো ভুলতে পারবো না।
জানা যায়, বাংলাদেশের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি গত ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ওই দিনই দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরু হলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জাহাজে আটকা পড়েন ক্যাপ্টেন জি এম নুর-ই- আলম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকসহ ২৯ বাংলাদেশি নাবিক। ইউক্রেনে হামলা শুরুর সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজটিতে গোলার আঘাতের ঘটনা ঘটল। আরিফ ২০১৮ সালে সমুদ্রগামী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি বহরে যুক্ত হয়।
এমএম/এসআর