সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৩ বছর পূর্বে ভুক্তভোগী নারীকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সাজানো কাজী দিয়ে বিয়ে করেন সাংবাদিক নামধারী প্রতারক মো. তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুল (৩২)।
র্যাব জানায়, বিয়ের পর তাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অচেতন করে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। সম্প্রতি তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ভিকটিম তাকে ডিভোর্স দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিবাদী ধারণকৃত এসব অশ্লীল ভিডিও বিভিন্ন ভুয়া ফেইসবুক আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এ ছাড়াও ভিকটিমের নিকট হতে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব বিষয়টি নিয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
লে. কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে একজন ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ২৮ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর মহানগরীর গাছা থেকে বিভিন্ন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়দানকারী প্রতারক মো. তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুলকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ সময় তার কাছ থেকে ২টি ভুয়া সাংবাদিকের আইডি কার্ড, ২টি ভুয়া টিন সার্টিফিকেট, ১১টি ভুয়া প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ড, ৩ প্রকার ভিজিটিং কার্ড, ১টি স্পাই ক্যামেরা, ৭টি এটিএম কার্ড, ৬টি চেক বই, ১টি পে-অর্ডার, ১টি বিবাহের হলফনামা, ১টি ভুয়া জীবন বৃত্তান্ত ফরম, ১টি সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত বেল্ট, ৪টি পেনড্রাইভ, ২টি মেমোরি কার্ড, ৬টি মোবাইল ফোন এবং ৪১টি সীম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার জন্মস্থান বাগেরহাট জেলায় এবং সে বিগত ১০ বছর যাবৎ গাজীপুরে বসবাস করছেন। আসামি বর্তমানে গাজীপুরের সালনা এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। পড়াশোনাঢ ৮ম শ্রেণির গণ্ডি পার হতে না পারলেও নিজেকে একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি আব্দুল্লাহপুরে ‘দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল’ নামের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের সংবাদকর্মী হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। সাংবাদিকতার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এছাড়াও বিবাদমান দুই পক্ষের সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয়ে সমস্যা সমাধানের মধ্যস্থতা করার জন্য টাকা দাবি করত। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সুসর্ম্পক রয়েছে দাবি করে আইনি সমস্যা সমাধান করে দিবে বলেও টাকা নিত। পাশাপাশি আইনি জটিলতা আছে এমন কিংবা আদালতে বিচারাধীন জমি উদ্ধারের নাম করে বিবাদমান পক্ষের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। তার প্রতারণার কাজে ফজল, তোফাজ্জল, মাসুম, আলতাফসহ আরো ২/৩ জন তাকে সহযোগিতা করত বলে জানা যায়। আসামি শেখ শিমুল নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে এবং তার বিভিন্ন ব্যাংকে ৫টি একাউন্ট রয়েছে মর্মে জানা যায়। এছাড়াও ভিন্ন নামে তিনি ২টি টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করেন বলে জানা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক আরো জানায়, ২০০৫ সালে তার নিজ এলাকায় ১ম বিয়ে করে। তার ১ম স্ত্রী ১ বছর সংসার করে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। পবরর্তীতে ২০১২ সালে ২য় বিয়ে করলে তার ২য় স্ত্রীও ১ বছর সংসার করে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। এরপর তিনি বাগেরহাট থেকে গাজীপুরে আসেন এবং একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। চাকরির সুবাদে ২০১৪ সালে এক গার্মেন্টসকর্মীকে বিয়ে করেন।
পরবর্তীতে শিমুল ২০১৮ সালে উত্তরখান মাজার তালতলা এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করাকালে তার ৩য় স্ত্রী বর্তমান থাকাবস্থায় নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে সেখানে কর্মরত একজন গার্মেন্টসকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক তৈরি করে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় শারীরিক সর্ম্পক করে এবং শারীরিক সর্ম্পকের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখে।
দীর্ঘ ৩ বছর যাবৎ ঘর সংসার করে। এ সময় শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ বিভিন্ন সময় তাদের শারীরিক সর্ম্পকের ধারণকৃত গোপন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভিকটিম আসামি মো. তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুলকে ডিভোর্স দেয়।
এরপর আসামি ১ মাস পূর্বে গাজীপুরের সালনা এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরীকালীন সময়ে অপর একজন নতুন ভিকটিম গার্মেন্টসকর্মীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং গত ২৬ জানুয়ারি ভুয়া নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সাজানো বিয়ে করে। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ৪টি পেনড্রাইভ ও ২টি মেমোরি কার্ডে বিপুল পরিমাণ অশ্লীল ভিডিও পাওয়া যায়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
-এনএন