বগুড়ায় ২ নৈশপ্রহরী হত্যার রহস্য উন্মোচন: গ্রেফতার ৩
Published : Sunday, 27 February, 2022 at 6:00 PM Count : 181
বগুড়ার বিসিকে দুই নৈশ্যপ্রহরী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। মাছু মেটালের পিকআপচালক ও হেলপারের মালামাল চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে দুই নৈশ্যপ্রহরীকে হত্যা করা হয় বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার।
শনিবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শাজাহানপুর উপজেলার মৃত মিসবাহুল মিল্লাত নান্নার ছেলে হোসাইন বিন মিল্লাত (৩৪), বগুড়ার নারুলীর তালপট্টি এলাকার সায়েদ হাসান ব্যাপারীর ছেলে সুমন ব্যাপারী (২৭) এবং একই এলাকার বদিউজ্জামানের ছেলে রাহাত (২১)। এদের মধ্যে নিনজা মাছু মেটালের পিকআপচালক, রাহাত হেলপার এবং সুমন ওই মেটালের সাবেক কর্মচারী। রোববার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকালে বিসিক শিল্পনগরীর মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজ- এর সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে শামছুল হক (৬০) ও আব্দুল হান্নান (৪৫) নামে নিহত দুই নৈশ প্রহরীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শামছুল হকের বাড়ি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান প্রতাপপুর এলাকায়। তিনি ওই গ্রামের মৃত হাসু আলীর ছেলে। আব্দুল হান্নান বগুড়া সদর উপজেলার নামুজা বড়সরলপুর গ্রামের আব্দুল জোব্বারের ছেলে।
পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সুমন ব্যাপারী জানায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে বগুড়ার সাতমাথার খোকন পার্কে নিনজা ও রাহাতের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তখন সুমন তার আর্থিক দুর্দশার কথা তাদের জানায় এবং তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার চায়। টাকা না দিয়ে নিনজা বলে তাদের একটা কাজ করে দিলে ২ লাখ টাকা পাবে। কাজের বিষয়ে সুমন জানতে চাইলে তারা বলে, ভোরে ফজরের নামাযের পর বিসিকের মাছু মেটালে যেতে হবে। নিনজা মাছু মেটালের ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা দিবে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সুমন মাছু মেটালের সামনে যায়। পরে তারা মোট পাঁচজন সেখানে মিলিত হয়। সেখানে নিনজার সহযোগিতায় তারা মাছু মেটালের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর প্রথমে নাইট গার্ড হান্নানকে কৌশলে পানির ট্যাংকির দিকে নিয়ে লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে জোরে আঘাত করে মৃত্য নিশ্চিত করে ট্যাংকির ভেতরে ফেলে দেয়। এরপর অপর নাইট গার্ড শামসুলকে ঘুম থেকে ডেকে কৌশলে একই জায়গায় নিয়ে তাকেও লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করে একই ট্যাংকিতে ফেলে দেয়।
তারপর নিনজা হান্নানের ব্যবহৃত মোবাইল ও সিমকার্ড সুমনকে প্রদান করে গাজীপুর চলে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে হান্নানের মোবাইল দিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবি জানাতে বলে।
পুলিশ সুপার বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মাছু মেটালের ড্রাইভার নিনজা ওই মেটাল থেকে বিভিন্ন সময়ে মালামাল চুরি করে বাইরে বিক্রি করে আসছিল। এই বিষয়ে নিয়ে নাইট গার্ডদের সাথে সমস্যা হওয়ায় নাইট গার্ডরা বিষয়টি মালিক পক্ষকে জানানোর কথা বলে গার্ড হান্নান ও শামসুল।
পরে চুরি বিষয়টি ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নিনজা তার সহযোগীদেরসহ কৌশলে নাইট গার্ড হান্নান ও শামসুলকে হত্যা করে এই অপহরণের নাটক সাজায়।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হবে।
-এ/এনএন