নয় কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর-পানপাড়া ৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার শেষ হওয়ার চার দিনের মাথায় উঠে আসছে কার্পেটিং।
নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করে এলাকাবাসী হাত দিয়ে সড়কের পিচ তুলে ফেলেন। এর আগে দফায় দফায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন সরেজমিনে পরিদর্শনকালে সড়কের নির্মাণ কাজ তদারকি করেন। এ সময় ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদেরকে সড়কটি দ্রত সময়ে মানসম্মত ভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় মনির হোসেন, জাবেদ জানান, নিম্নমানের বিটুমিন দেয়ায় কাজের গুনগত মান নেই। তিন মাসও টিকবে না বলে তারা অভিমত দেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক সংস্কার করায় কাজ শেষ হওয়ার চার দিনের মাথায় সড়কের কয়েকটি অংশের পিচ ঢালাই (কার্পেটিং) উঠে গেছে। পাথর, বিটুমিনসহ চলমান সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে যান চলাচল শুরু হওয়ায় এই কার্পেটিং অনেক জায়গায় উঠে গেছে।
নিয়ম অনুসারে কমপ্রেশার মেশিন দিয়ে সড়ক পরিস্কার করে প্রাইম কোট দিয়ে পিচ ঢালাইয়ের কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে ঠিকাদাররা গাছের পাতা ও ময়লার উপরই চালিয়েছেন কার্পেটিংয়ের কাজ।
সড়কের তিন কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নমানের বিটুমিন, বালি, পাথরের মিশ্রণে কাজ করায় যানবাহন চলাচলের সময় চাকার সঙ্গে অনেক জায়গার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে পল্লী সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতকরণ জিওবি মেইনটেন্যান্স প্রকল্পের আওতায় খানাখন্দে ভরা ছয় কিলোমিটার সড়কের সংস্কার অনুমোদন দেয়।
এলজিইডির রায়পুর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সড়কটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এলজিইডি মন্ত্রণালয় থেকে আরসিআইপি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স তমা এন্টারপ্রাইজ ও এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং দেড় বছর আগে কাজটি শুরু করেছিল। প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কে নয় কোটি ১৭ লাখ টাকায় বরাদ্দ হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় শেষ সময়ে এসে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে কাজটি শেষ করেছে ঠিকাদারি দুই প্রতিষ্ঠান।
নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার আবু তাহের ও ভুলু চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, এটি লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর এলজিইডি'র প্রকৌশলীরা দেখভাল করেন। প্রতিনিয়ত কাজের মান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। তারপরও নির্মাণ কাজে কোন ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নেবে আমরা সেটা মানতে রাজি।
সড়ক সংস্কার কাজের অনিয়মের চিত্র দেখে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনজন দাশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এলজিইডি এর প্রকৌশলীকে মুঠোফোনে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
উপজেলা এলজিইডি'র প্রকৌশলী মোস্তফা মিনহাজ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা কাজের ধীরগতি ও গাফিলতির বিষয়টি জানিয়েছেন। এরপরেই গত সপ্তাহে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে মান বজায় রেখে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম করে থাকলে ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
-ওআর/এমএ