অবৈধ ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানোর কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে স্বয়ং ইট ভাটা শিল্প মালিক সমিতি। তারপরও কতিপয় অবৈধ ইট ভাটার মালিক ভাটায় কাঠ পোড়াচ্ছেন।
গত ১৩ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর মাদারীপুর ইট ভাটা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর বন্ধ হয়নি।
এদিকে, মাদারীপুরে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইট ভাটা। অধিকাংশ ইট ভাটাই কৃষি জমি দখল করে গড়ে উঠছে। পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। ভাটার আগ্রাসনে দিন দিন কমে যাচ্ছে চার ফসলি জমি। এর ফলে ফসল উৎপাদন কমছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ- কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না ইট ভাটার মালিক। ইট ভাটায় কাঠ ব্যবহার করার কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির বৃক্ষ। আর কৃষি জমি থেকে মাটি সংগ্রহ চলছে অবাধে। পরিবেশ হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন কতিপয় ইট ভাটা মালিকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, জেলার মোট এক লাখ ১২ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হাজার হেক্টর জমি কৃষি জমি হিসেবে চিহ্নিত। ‘কৃষি ও কৃষি জমি নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইট ভাটা। এছাড়া ভাটার দূষণ ও বিরূপ প্রভাবে আশপাশের জমির ফসলহানি হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি ফসলি জমি নষ্ট হয় এমন স্থানে যেন ই টভাটার লাইসেন্স দেয়া না হয়।
জেলায় বৈধ অবৈধ ইট ভাটার তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হলেও তারা তথ্য দেয়নি।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় শতাধিক ইট ভাটা রয়েছে। এসব ইট ভাটার অধিকাংশই অবৈধ। আর এসব ইট ভাটার বেশির ভাগই স্থাপন করা হচ্ছে ফসলি জমি বা এর পাশ ঘেঁষে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩-এর ৮(১)(ঘ) তে বলা আছে- কৃষি জমিতে কোন ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। শুধু তা-ই নয়, ওই আইনের ৩(ক)তে বলা হয়েছে- নির্ধারিত সীমারেখার (ফসলি জমি) এক কিলোমিটারের মধ্যেও কোন ইট ভাটা করা যাবে না। তাছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ভাটা মালিকরা লংঘন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, সম্প্রতি স্থানীয় ইট ভাটা মালিকরা জোরপূর্বক তাদের জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় তারা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে।
মাদারীপুর ইট ভাটা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান যাচ্চু খান ও সাধারণ সম্পদক মিলন চৌধুরী জানান, আমাদের অধিকাংশ বৈধ ভাটাতে এখন আর কাঠ পোড়ানো হয় না। তবে হেমায়েত কাজীর ভাটা, রহিম খান আল আমিন হাওলাদার আ. রব আকন, সোবাহান ফকির জিয়া মাল, ইমান খান, মান্নান খান, রুস্তম খান, শাহিন বেপারী, আমির হোসেন, এনামুল হকের অবৈধ ভাটায় নিয়মিত কাঠ পোড়ানো হয়। বিষয়টি ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে ও জেলা প্রশাসককে লিখিত ভাবে জানালে তিনি এসব ভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্দেশ কার্যত বাস্তবায়িত হয়নি। এখনও এসব ভাটায় দেদারছে জ্বলছে কাঠ।
তবে এসব অবৈধ ইট ভাটার কোন মালিক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজী হননি।
জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, কোন ভাটায় ইট পোড়াতে কাঠ পোড়ানো যাবেনা। কোন কৃষি জমি নষ্ট করে ইট ভাটা করা যাবে না। আইনগত ভাবে এটা নিষিদ্ধ। অবৈধ ইট ভাটা থাকলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।
-এএইচ/এমএ