মৃত্যুর আগে স্বীকৃতি পেতে চান মুক্তিযোদ্ধা কাজেম উদ্দিন
Published : Wednesday, 16 December, 2020 at 1:53 PM Count : 74
কাজেম উদ্দিন সিকদার (৭৭)। বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়নের কুন্ডুপাড়া গ্রামে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর দীর্ঘ ৪৯ বছর পরও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাননি। বর্তমানে তিনি বৃদ্ধা স্ত্রীসহ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই জীবন সায়াহ্নে এসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতির আশায় তিনি বিভিন্ন কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
জানা যায়, তরুণ কাজেম উদ্দিন একাত্তরের সেপ্টেম্বরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার হান্ডিয়াল নওগাঁ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মির্জার অধীনে অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি জোনাইল গোপালপুরে এসে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখান থেকে অপর দুজন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নগর ইউনিয়নের পাঙ্গিয়ার দিঘী এলাকায় একজন পাকিস্তানী ও দুজন রাজাকারকে গুলি করে হত্যা করেন।
একইভাবে বড়াইগ্রাম থানার মোড়ে (এক সময়ের রাজাকার মোড় নামে পরিচিতি) তিনজন রাজাকারকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়ার ঘটনায় তিনি সরাসরি অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে তিনি নাটোর রাজবাড়িতে স্থাপিত মিলিশিয়া ক্যাম্পে ল্যাফটেনেন্ট আব্দুর রশিদের হাতে তার অস্ত্রটি (যার নম্বর ওঢ ১৭১৫৬) জমা দেন। যুদ্ধের পর জীবিকার প্রয়োজনে ছুটে বেড়াতে গিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা হয়নি আর। কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে ২০১৩ সালে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করার জন্য আবেদনের সুযোগ দিলে তিনিও আবেদন করেন।
এসময় তিনি অস্ত্র জমাদানের প্রমাণপত্র, গণপরিষদ সদস্য শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী ও মহকুমা প্রশাসক আব্দুল জব্বার স্বাক্ষরিত সনদপত্র ও বড়াইগ্রাম থানার মুক্তিফৌজ সর্বাধিনায়ক আব্দুল জলিল স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকারী হিসাবে দেয়া প্রশংসাপত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেন।
বাছাইয়ে উপজেলার ১৮০ জন আবেদনকারীর মাঝে তিনিসহ সাতজন টিকে যান। পরবর্তীতে বগুড়ায় আরো একটি সাক্ষাৎকারে অংশ নেন। এরপর চূড়ান্তভাবে তাদের মধ্যে একজন তালিকাভুক্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে তিনিসহ অপর ছয়জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার আশা পূরণ হবে কিনা সে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে অংশ্রহণ করেছিলাম। দেশের কাছে কোন প্রতিদান চাইনি। শুধু মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়ে নিজের কাজের মূল্যায়ন টুকু দেখে যেতে চাই।
উপজেলার জোনাইল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ (গেজেট নং ১২৮১) জানান, তিনি আমাদের সঙ্গে স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তারপর আমরা তালিকাভুক্ত হলেও তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বড়াইগ্রাম থানার মুক্তিফৌজের সর্বাধিনায়ক আব্দুল জলিল জানান, তিনি আমার অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত না হওয়ায় বর্তমানে বৃদ্ধ বয়সে অসহায় জীবনযাপন করছেন। আমি দ্রুত তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবী জানাচ্ছি।
ওএইচ/এইচএস