For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

হিলি মুক্ত দিবস আজ

Published : Friday, 11 December, 2020 at 10:04 AM Count : 154

আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে ৭ নং সেক্টরের আওতায় দিনাজপুরেহাকিমপুর হানাদার মুক্ত হয়। 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় গ্রামের মোস্তফা, একরাম উদ্দিন, বানিয়াল গ্রামের মুজিব উদ্দিন শেখ, ইসমাইলপুর গ্রামের মনিরউদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন, বৈগ্রামের ইয়াদ আলী ও চেংগ্রামের ওয়াসিম উদ্দিন শহীদ হন।

উপজেলার মুহাড়াপাড়া এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর স্বরণে সম্মুখ সমর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

হাকিমপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে স্পষ্ট হয়ে উঠে যেকোন মুহুর্তে পাক সেনাদের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ বাঁধতে পারে। এমতবস্থায় সারাদেশের সঙ্গে হাকিমপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের আহ্বানে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম খলিলুর রহমানকে একটি স্বেচ্ছসেবক বাহিনী গঠন করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
স্কুল, কলেজ ও উৎসাহী যুবকদের সমন্বয়ে ওই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী (২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর বর্বর হামলায় ঢাকা আক্রমণের পর) পাক হানাদারদের আক্রমণের আগে থেকেই গাছ কেটে ও রাস্তা খনন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখে এবং বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।

একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের নির্দেশে থানা ও ইপিআর (ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস) ক্যাম্প থেকে সেচ্ছাসেবক বাহিনীর কাছে ৩০৩ রাইফেল হস্তান্তর করা হয়। এ সময় তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর নিজাম উদ্দিন ১৭টি গাড়ি বহরসহ বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফুলবাড়িতে এসে অবস্থান গ্রহণ করে এবং ওই স্বেচ্ছাসেবক দলকে হিলি ইপিআর ক্যাম্পের সুবেদার শুকুর আলীর নেতৃত্বে কয়েকজন ইপিআরকে বিহারী অধ্যুষিত পার্বতীপুরের হাবড়ায় খান সেনাদের প্রতিরোধ করার জন্য পাঠানো হয়।

এ সময় সেখানে সেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে পাক হানাদারদের সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। প্রচন্ড শেলিং ও বিভিন্ন ধরনের গোলার আঘাতে সেচ্ছাসেবক ওই দলের ৯ জন যোদ্ধা শহীদ হন। এ যুদ্ধে সব রকম সহায়তা ও অস্ত্র সরবরাহের আশ্বাস দিলেও ওই কমান্ডিং অফিসার মেজর নিজামুদ্দিন অস্ত্র সরবরাহ না করে সরে এসে তিনি বিরামপুরে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে বিরামপুরে মেজর নিজামুদ্দিনের মৃত্যু হয়। এর কয়েকদিন পর ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে দলবলসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আ. কুদ্দুস মুন্সীর সহযোগীতায় চিকিৎসা করেন ও তার পরামর্শে এই এলাকার প্রতিরক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

১৯ এপ্রিল ঘোড়াঘাট ও পাঁচবিবি এ দুই দিক থেকে পাক হানাদার বাহিনীরা রাস্তার উভয় পাশে গুলি বর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করতে করতে ত্রাসের সৃষ্টি করে হাকিমপুর আক্রমণ করে। ১৯, ২০ ও ২১ এপ্রিল হাকিমপুরে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। মোকাবেলা করতে গিয়ে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের দলের দু'জন শহীদ হন এবং ক্যাপ্টেন আনোয়ার দলবলসহ ভারতের বালুরঘাটের তিওড়ে অবস্থান নেন।

মুক্তিযোদ্ধা সুরত আলী আলী জানান, ক্যাপ্টেন আনোয়ারের সিদ্ধান্তে ভারতের পশ্চিম হিলির ডা. মনিন্দ্রনাথের বাসভবনে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয় এবং এ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বালুরঘাট ট্রানজিট ক্যাম্পে তালিকাভুক্ত করে পতিরামে ট্রেনিয়ের জন্য পাঠানো হয়। এ সময় ক্যাপ্টেন আনোয়ার ও তার দলের কয়েকজন সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক ট্রেনিং প্রদান করেন। বালুরঘাট ট্রানজিট ক্যাম্পটি তৎকালীন এমপির তত্বাবধানে পরিচালিত হয়। বিশেষ করে সংগঠক হিসেবে এমপি আজিজুর রহমান (পলাশবাড়ি) উল্লেখ্যযোগ্য।

ডা. ওয়াকিল, কুদ্দুস মুন্সী প্রমূখ পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বালুরঘাটের কুমারপাড়ার কুড়মাইল ক্যাম্পে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, অধ্যাপক আবু সাইদের (সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী) নেতৃত্বে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেচ্ছাসেবক দল মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করা হয়। ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন ভাবে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পাক হানাদাররা ছাতনী গ্রামে শক্ত ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে। 

বিভিন্ন দিকে ক্যাম্প গঠনের মাধ্যমে ভারী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অবস্থান গ্রহণ করে এবং মুহাড়া পাড়ায় তারা একটি গভীর খাল কেটে বেশ কয়েকটি বাংকার তৈরি করে। ৬-৭ হাজার পাক সেনা ৪০টি ট্যাংক নিয়ে সেখানে অবস্থান করতে থাকে। ০৬ ডিসেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে সমর্থনদানের পর হাকিমপুরে ভারত-বাংলাদেশ মিত্র বাহিনীর সঙ্গে পাক সেনাদের প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হয়।

প্রথম দিকে মুহাড়া পাড়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিত্র বাহিনী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এ সময় তরুণ মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা শহীদ হন। পরবর্তীতে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সুসংগঠিত হয়ে ১০ ডিসেম্বর মুহাড়া পাড়া এলাকাসহ পাক সেনাদের বিভিন্ন আস্তানায় আকাশ পথে ও স্থল পথে একসঙ্গে হামলা চালায়।

দুই দিন যাবৎ প্রচন্ড যুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনী পরাস্থ হলে ১১ ডিসেম্বর বেলা ১টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের ৭ সেক্টরের আওতায় দিনাজপুরের হিলি-হাকিমপুর হানাদার মুক্ত হয়।

-এমআর/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,