দুই মিনিটের রাস্তা পার হতে লাগে আধা ঘন্টা। কখনোবা এর থেকেও বেশি। ফলে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই৷ বিশেষ করে কোন রোগী নিয়ে হাসপাতালে ঢুকতে বা বের হতে গেলেই পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। এমনটিই বলছিলেন এ্যাম্বুলেন্স চালক রাকিব।
রাকিব জানান, রোগী নিয়ে যেদিনই এই সড়ক পাড় হতে হয় ঠিক আধা মিনিটের রাস্তা পাড় হতে মিনিমাম আধা ঘন্টা সময়েরও বেশি সময় বসে থাকতে হয়। কারণ হিসেবে তিনি জানান জিরানী-আমতলা সড়কে প্রায় ৭/৮'শ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল করে। সেই সাথে রিয়েছে বেশ কিছু মাহিন্দ্র অটোরিকশা ও লেগুনা। এগুলো সড়কের মাথায় জিরানী বাজার ষ্ট্যান্ডে যত্রতত্রভাবে পার্কিং করা থাকে। কোন নিয়ম না মেনেই যে যার মত করে যানবাহন সড়কের উপর রেখেই যাত্রী উঠা নামা করিয়ে থাকে। ফলে যানজট লেগে থাকে। এ্যাম্বুলেন্সে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
বলছিলেন জিরানী-আমতলা আঞ্চলিক সড়কের জিরানী বাজার রাস্তার মুখেই এই অবস্থা লেগেই থাকে। আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপির ব্যস্ততম এই সড়কটি দিয়ে লাখো মানুষের চলাচল। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার কারণে রাস্তার মুখে জ্যামের কারণে পড়তে হয় বিপাকে, ভোগান্তিতে আর দুর্ভোগে।
এই সড়কে চলাচলরত অধিকাংশ অটোরিকশা চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, জিরানী-আমতলা সড়কে প্রায় ৮ শতাধিক অটোরিকশা চলাচল করে। এত সংখ্যক অটোরিকশা ছাড়াও আরো বেশী অটোরিকশা চলাচল করলেও সমস্যা হতো না, যদি বাইরের অটোরিকশা এই সড়কে না ঢুকত। বাইরের যেমন আমতলা, শিমুলিয়া, মাঝার রোড, পানিশাইল, নাল্লাপোল্লাসহ বিভিন্ন এলাকার অটোরিকশা এই সড়কে ঢুকে পড়ে যার কারণে যানজত প্রতিনিয়ত লেগেই থাকে। তবে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যানজট কমাতে স্থানীয় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা সিরিয়াল করে দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে সিরিয়ালের নামে ৫'শ টাকার বিনিময়ে একটা করে স্টিকার দিয়েছেন।এরই মধ্যে তিন শতাধিক অটোরিকশার মধ্যে এই স্টিকার প্রদান করেছেন। তবে অনেককেই আবার বিনামূল্যে এই স্টিকার প্রদান করেছেন বলেও জানান তারা।
শুধু তাই নয়, এই সড়কের উভয় পাশেই রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়কের উপর গাড়ি রেখেই ওই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল লোড-আনলোড করতে করে থাকেন। ফলে সড়কের উভয় পাশেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। আর চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় পথচারী সহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে।
তারা আরো জানান, সড়কের পাশেই নির্মাণ হচ্ছে ভবন। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় ভবন মালিকরা কোন প্রকার সেফটি নেট ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছেন। এতে একদিকে যেমন ঝুঁকি রয়েছে ওই ভবনে কর্মরত শ্রমিকদের অন্যদিকে ঝুঁকি রয়েছে পথচারী সহ ওই সড়ক দিয়ে চলাচল রত মানুষদের। আর সড়কের উপর ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান রেখেই মালামাল লোড আনলোড করলে পড়তে হয় দীর্ঘ যানজটের।
সরেজমিনে জিরানী-আমতলা সড়কে গিয়ে দেখা যায়, জিরানী-আমতলা সড়কের সিনহা নীট এন্ড ডেনিমস কারখানার পাশেই পাচ তলা একটি ভবন নির্মাণ করছেন খোরশেদ নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু কোন প্রকার সেফটি নেট ছাড়াই ওই ভবন নির্মাণ করছেন তিনি। ইটবোঝাই ট্রাক ভবনের সামনে সড়কের উপর দাড় করিয়ে আনলোড করতে থাকে এরফলে ওই সড়কের উভয় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে বিভিন্ন রিকশা, অটোরিকশা সহ বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও পথচারীরা। আর এই ভোগান্তি একদিনের নয়,দীর্ঘ দিনের।
শুধু তাই নয় ওই সড়কের উভয় পাশেই বিপুল সংখ্যক দোকান পাটের মালামাল রাস্তার উপর গাড়ি রেখেই আনলোড করা হয়।
তবে এলাকাবাসি বলছেন, রাত ১১টার পরে দোকানের মালামাল ও বাড়ি নির্মাণের জিনিসপত্র লোড-আনলোড করলে ওই সড়কে জানযট হবে না। আর এতে ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে হাজারো মানুষ। শুধু তাই নয় ছোট্ট এই সড়কে ৭/৮'শ অটোরিকশা যা খুবই বেশি। এগুলা কমানো দরকার। তবে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবি এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ সড়কে যানজট কমাতে শুধু স্থানীয় মালিকানাধীন অটোরিকশা রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এতে বাহিরের কোন অটোরিকশা এই সড়কে ঢুকতে পারবে না। ফলে এই সড়কে যানজট হবে না। এটা খুবই ভাল একটা উদ্যোগ।
এব্যাপারে শিমুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি জানান, জিরানী-আমতলা সড়কে প্রায় ৭/৮ শত অটোরিকশা চলাচল করে। যা এই রাস্তার জন্য খুবই বেশী। আর জিরানী রোডের মাথায় যানজট যার ফলে লেগেই থাকে। একটা গাড়ী বের হতে গেলে এখানে বসে থাকতে হয় আধা ঘন্টার মত। এতে ভোগান্তির শেষ নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি বলে জানান তিনি।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবি এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ জানান,জিরানী-আমতলা সড়কটি এই অঞ্চলের জন্য খুবই ব্যস্ততম একটি সড়ক। এই সড়কটি দিয়ে অতিরিক্ত অটোরিকশা চলাচল করে। যার ফলে জিরানী রাস্তার মূখে ২৪ ঘন্টা যানজট লেগেই থাকে। রোগী নিয়ে একটা এ্যাম্বুলেন্স সময় মত ঢুকতে পারে না, কোন দূর্ঘটনা ঘটলে ফায়ারসার্ভিসের গাড়ী ঢুকতে পারে না, এই স্থানে অটোরিকশাগুলা যত্রতত্রভাবে থাকার কারণে গিঞ্জি অবস্থা লেগেই থাকে। তাই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে অন্তত যানজট নিরসনের জন্য একটা করে স্টিকার বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে গাড়ীগুলো সিরিয়াল মত থাকার জন্য। তবে অভিযোগ উঠেছে টাকার বিনিময়ে স্টিকার প্রদান করা হয়েছে, বিষয়টি সত্য না, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিষদের পক্ষ থেকে স্টিকার দেয়া হয়েছে।
এআই/এইচএস