বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেদে সম্প্রদায়
Published : Thursday, 29 October, 2020 at 12:01 PM Count : 241
শত কষ্টের মাঝেও বেদে সম্প্রদায়রা তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রাখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জীবনযাপন করে আসছেন।
বেদে সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো বছরে ৬ মাস পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙিয়ে গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে দিন পার করছে। এক সময় বেদে সম্প্রদায়ের মানুষগুলো নদী পথে নৌকায় করে আসতো। এখন তারা স্থল পথে বাস ও ট্রেনযোগে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় চলাচল করে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার পাড়সিংড়া গ্রাম থেকে ১৪টি বেদে পরিবার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পশ্চিম পাড়ে এসে খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙিয়ে বসবাস করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বেদে সম্প্রদায়ের বসবাস স্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১৪টি বেদে পরিবারের শিশু-নারীসহ প্রায় ৫০-৬০ জন সদস্য গত ৮-১০ দিন ধরে জীবিকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তবে তাদের সঙ্গে সাপ না থাকলেও দু-বেলা খাবারের জন্য তাদের কেউ কেউ গ্রামের নির্ভৃত পল্লীতে মানুষের বাড়ি বাড়ি বানরের খেলাসহ বিভিন্ন রোগের তাবিজ-কোবজ, সিংয়া লাগানো, দাঁতের পোঁকা তোলা, কটক মাছের কাঁটা ও বাত-ব্যথার তেল বিক্রির জন্য অনেকেই বেড়িয়ে পড়েছেন।
সম্প্রদায়ের নারীরা কেউ কেউ সকালের রান্না শেষ করে ছেলে-মেয়েদের খাওয়াচ্ছেন। বানর খেলা ও বিভিন্ন রোগের তাবিজ কবজ বিক্রি করেই যা আয় হয় তা তাই দিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে তাদের বেঁচে থাকা। তবে এখনকার যুগে মানুষ আর আগের মত বানরের খেলাসহ তাবিজ কবজের প্রতি বিশ্বাস কিছুটা কমে গেছে।
তারপরও তারা বাপ-দাদার পেশা যুগের পর যুগ ধরে রেখেছেন বলে জানান বুড়ি খাতুন, আলামিন ও তার স্ত্রী মর্জিনা খাতুন।
তারা আরও জানান, সারাদিন ২শ থেকে আড়াইশ টাকা আয় করে তা দিয়ে কি হামার জীবন চলে বাহে (আমাদের জীবন চলে ভাই)।
শিশু শারাফাত ও আখিরুল জানায়, দেখেন না ময়লা জামা-কাপড় পড়ে আছি। নতুন জামা-কাপড় নেই। লেখাপড়ার জন্য মন চায়। কিন্তু দু-বেলা খাবারের জন্য দেশ-বিদেশে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে হয় কি করে স্কুলে যাব। আমাদের পড়াশুনা করে কি হবে? আমরা পেট ভরে খেতে চাই। বাবা-মায়ের সঙ্গে দেশ-বিদেশে ঘুরে আমাদের খুবই ভাল লাগে।
বেদে সম্প্রদায়ের সর্দার বরণ আলী (৫৫) জানান, একদিকে বেঁচে থাকা অন্যদিকে বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। স্ত্রী-সন্তান ও ছেলে-মেয়েসহ নাতি-নাতনিদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা আকাশের নিচে তাবুতে বসবাস করছি। আমাদের বেদে সস্প্রদায়ের যতই দিন যাচ্ছে ততই করুণ অবস্থা দাঁড়াচ্ছে। আমাদের মত শত শত গরীব অসহায় বেদে পরিবার বেঁচে থাকার তাগিতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে একই পেশায় নিয়োজিত। সরকার সুযোগ-সুবিধা দিলে বেদে সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো আরও স্বচ্ছল হতো। তবে দেশ-বিদেশে ঘুরে শত কষ্টের মাঝেও সুখ পাওয়া যায়।
-এসি/এমএ