ঢালচর তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে |
![]() তাদের সবার বাড়ি ছিল ঢালচরে। গত ১০ বছরে দ্বীপ ঢালচর বহু মানুষকে বিতাড়িত করেছে। মানুষগুলো কোথায় যাচ্ছে? কী করছে? রোজগারের ব্যবস্থা কী হয়েছে? শিশুরা কী নতুন করে স্কুলের নাগাল পেয়েছে? এসব সন্ধান করতে গিয়ে তুলাতলী আশ্রয়ণে ঢালচরের অনেকের সন্ধান পাই। না, তারা ভালো নেই। ঢালচর এদের সব দিয়েছিল। ঢালচরই আবার সব কেড়ে নিয়েছে। মানুষগুলো আবার পথে বসেছে। চরফ্যাশনের তুলাতলী সরকারি আশ্রয়ণে পাওয়া ঘরের সমানে জাল মেরামত করছিলেন ভদ্র পাড়ার বেলাল হোসেন। বয়স চল্লিশের কোঠায়। নিজের কাজে মনযোগ রেখেই বেলাল বলেন, 'এক সময় গৃহস্থালির কাজ করলেও এখন তাকে জীবিকার তাগিদে নদীতে নামতে হয়েছে। বড় ভাই নীরব আর ছোট ভাই জাহাঙ্গীরও একই পেশায়। দুই ভাই এক ট্রলারে মাছ ধরেন; আরেক ভাই বরফের ব্যবসা করেন। অথচ তারা সকলেই এক সময় নিজেদের জমিতেই চাষাবাদ করতেন। জমি ছিল প্রায় ১৫ একর। আর এই চাষাবাদে নেতৃত্ব দিতেন বাবা সালাহউদ্দিন রত্তন। সেসব এখন অতীত স্মৃতি।' তিনি আরও বলেন, 'পুরানো দিনের কথা মনে করে লাভ কী? ভাগ্যে নাই। তাই সব নিয়া গেছে গাঙ। চাইলে গাঙই আবার দিতে পারে। আগে জমিতে চাষাবাদ করতাম; আর এখন হারিয়ে যাওয়া সেই নদীর স্থানে বয়ে যাওয়া নদীতে মাছ ধরি। জমিতে ভালো ফসল পাওয়ার আশায় আল্লাহকে ডাকতাম, এখন নদীতে বেশি মাছের আশায় আল্লাহকে ডাকি।' ![]() অথচ এগুলো দেখে গিয়েছিলাম মাত্র ৪ মাস আগে। মালেক মাঝির কলোনি থেকে সাথী আর তার স্বামীকে দ্বীপ থেকে চলে যেতে দেখেছিলাম। ওরা ঢালচর ছেড়ে এখন দক্ষিণ আইচার কলোনীতে। ওদের ধারণা ঠিক- এ বর্ষাটাও টিকলো না মালেক মাঝির কলোনী। এবার গিয়ে চোখে পড়লো কলোনীর শেষ ভিটের অংশে। কলোনীর পাশে দুই প্রবীণ নারী রঙমেহের আর মোমেনা বেগমকে দেখেছিলাম- দু’জন সম্পর্কে বেয়াইন। একসঙ্গেই চলাফেরা করতেন। এই সঙটা ভেঙে গেছে। রঙমেহের চলে গেছেন ওপারে তার ছেলের কাছে; মোমেনা ঢালচরে আছেন তার জামাইয়ের (মেয়ের জামাই) কাছে। হায়রে প্রকৃতি, উপকূলের হেরে যাওয়া মানুষেরা আর কত পিছু হটবে? -এমএ |