ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা মামলায় গত ৩ বছর সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে ভরে গেছে মেহেরপুরের ৩ সড়ক। এর ফলে সড়কে সৃষ্ট জলবদ্ধতার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
সড়কগুলো হলো, বামন্দী-কাজিপুর, নওদাপাড়া-কাজীপুর ও আকুবপুর-মোহাম্মদপুর।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স ও মেহেরপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের দ্বন্দ্বের জেরে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় ১৩ কিলোমিটারের এই ৩ সড়ক সংস্কারে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ শুরু হয়নি গত ৩ বছরেও। এতে এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সড়কে দুর্ভোগের কারণে জনগণের কটাক্ষে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
তবে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
গাংনী উপজেলার এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, দুই কোটি ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দে উপজেলার ৫ কি.মি. বামন্দী-কাজিপুর, এক কোটি ১৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দে ৩ কি.মি. নওয়াপাড়া-কাজীপুর ও দুই কোটি টাকা বরাদ্দে ৫ কি.মি. দৈর্ঘ্যের আকুবপুর-মোহাম্মদপুর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ৩টি সংস্কারের জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডার পায় চুয়াডাঙ্গার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স। কিন্তু টেন্ডারে অসংগতি থাকায় পুনঃটেন্ডার আহ্বান করে মেহেরপুর এলজিইডি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স উচ্চ আদালতে মামলা করেন। এর ফলে ঝুলে যায় সড়ক সংস্কারের কাজ।
গাংনী উপজেলার বামুন্দীর বাসিন্দা ডা. নূরুল হক বলেন, 'মেহেরপুর জেলার উত্তর-পূর্ব অংশে কয়েক লক্ষ মানুষের চলাচল ওই ৩টি সড়ক পথে। এর পাশাপাশি এসব সড়কে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সঙ্গে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সংযোগ রয়েছে। ফলে এই দুই উপজেলার মানুষও এসব সড়কে চলাচল করে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভেঙে চুরে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ধীরে ধীরে রাস্তার খোয়া আর বিটুমিন উঠে গর্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে জনদুর্ভোগও।'
তিনি বলেন, 'এ ৩ সড়ক পথে মাঠ থেকে ট্রাক ভর্তি সবজি নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়। ভাঙ্গাচোরা সড়কগুলোতে প্রায়ই আটকে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের যানবহান। এসব সড়কে দুর্ঘটনা যেন নিত্যসঙ্গী। আর এ ৩টি সড়কের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বামন্দী-নওদাপাড়া সড়কের বালিয়াঘাট গ্রামের মধ্যে। গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট গ্রামের আমেনা ভ্যারাইটি স্টোরের সামনের সড়কে প্রায় দুইশত ফুট এলাকা দেখলে মনে হবে একটি পুকুর।'
সড়কে দুর্ভোগের বিষয়ে আমেনা ভ্যারাইটি স্টোরের মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, 'এখানে প্রতিনিয়তই শ্যালো
ইঞ্জিন চালিত নছিমন-করিমন, আলগামন-করিমন, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান, মাইক্রোবাসসহ নানা ধরণের যানবাহন আটকে যায়। অনেক যাত্রী পানির মধ্যে পড়ে জামা-কাপড় নষ্ট করে ফেলেন। প্রায় সময়ই আমরা তাদেরকে উদ্ধার করি।'
পরিবহন চালক গাংনী উপজেলার বামন্দী গ্রামের আলী হোসেন বলেন, 'উপজেলার বামন্দী-কাজিপুর সড়ক দিয়ে কিছু বাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুর হয়ে ঢাকায় চলাচল করে। রাস্তার এ বেহাল অবস্থার কারণে ওই সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক পথে আমাদের কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনি হয়ে ঢাকা যেতে হয়। এতে চলাচলে প্রায় ৪০ কি.মি. পথ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ওই সড়কের কাছের যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।'
বালিয়াঘাট গ্রামের বাসিন্দা সামেনা খাতুন বলেন, 'রাস্তা দিয়ে ছেলে-মেয়েরা চলাচল করতে পারে না। রাস্তায় জমা এ পানিতে ডুবে শিশুরা মারা যেতে পারে, এমন আশংকায় থাকি আমরা। তাই আমরা শিশুদের একা রাস্তায় ছাড়িনা। অপরদিকে ভাঙ্গা রাস্তার কারণে আমাদের বাড়িসহ রাস্তার আশপাশের বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।'
গাংনীর বালিয়াঘাট গ্রামের বাসিন্দা ও বামন্দী ইউপি সদস্য আসাদুল ইসলাম বলেন, 'স্থানীয় সব জনপ্রতিনিধিদের ও এলজিইডি’র বিভিন্ন দপ্তরে আমরা সব সময় জানাচ্ছি এসব দুর্ভোগের কথা। তারপরও হচ্ছে না রাস্তার সংস্কার। রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় পথচারীরা আমাদেরকে গালমন্দ করছেন।'
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স এর পক্ষে জাকাউল্লাহ বলেন, 'একই দিনে ৯টি কাজের লটারি হয়। এর মধ্যে ৬টি কাজের অর্ডার দিলেও অন্য ৩টি কাজে ভুল আছে অজুহাত দেখিয়ে এলজিইডি কাজের পুনরায় টেন্ডার দেয়। ফলে দরপত্র আহ্বানের পরও কার্যাদেশ না পাওয়ায় আদালতে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।'
এলজিইডি গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ বলেন, 'মামলার কারণে অন্য কোন প্রকল্প থেকে ওই সড়কগুলো সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বন্যা পরবর্তী রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে রাস্তা ৩টির নাম দেওয়া হয়েছে। ওই মুর্হূতে যদি মামলা নিষ্পত্তি হয় অথবা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যদি মামলা তুলে নেন তাহলে সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।'
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, 'গত সপ্তাহে ঢাকায় গিয়েও আমি রাস্তা ৩টি সম্পর্কে সড়ক মন্ত্রীকে জানিয়ে এসেছি। তবে আমরা কেউ আদালতের ঊর্ধ্বে নই। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে একসঙ্গে বসে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। উচ্চ আদালতের কার্যক্রম চালু হলে মামলাটি নিষ্পত্তির মাধ্যমে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।'
-এমএ