জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হারুনজ্ঞাগ্রামের প্রায় দেড়শ বিঘা কৃষি জমি এখন পানির নিচে ডুবে আছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ৩ বছর ধরে ওই গ্রামের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না।
এর মাঝেও অনেকে কষ্ট করে জমিতে ধানের চারা রোপণ করলেও তা পচে নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও থেমে থেমে আসা বৃষ্টির পানি জমে থাকার ফলে আগে থেকে রোপণকৃত ধানের চারাগুলো পানির নিচে ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়ে বিপাকে পড়ছেন গ্রামের অনেক কৃষক। তাদের চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির ধানের চারা। তাদের চোখে-মুখে ফসল হারানোর শঙ্কার ছাপ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে উপজেলার হারুনজ্ঞাগ্রামের ছয়পাড়ার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশারীরা। তারা অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন, যেখানে সেখানে যে যার মতো বাড়িঘর নির্মাণ আর এলাকার বিভিন্ন ব্রিজ ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে এলাকার কৃষি জমি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হারুনজ্ঞাগ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডের ফকির পাড়া, সাগিদাপাড়া, সর্দারপাড়া, পুন্ডিতপাড়া, মন্ডরপাড়া ও খানপাড়ার আশপাশে প্রায় দেড়শ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। ওই ৬ পাড়ার কৃষি জামির পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় জমিগুলো বর্তমান পানির নিচে বছরের পর বছর ধরে ডুবে আছে। জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকার ফলে প্রায় ৩ বছর ধরে ওই গ্রামের কৃষকরা তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। এর মাঝেও অন্যের নিকট থেকে ধার-দেনা ও মনের আশা নিয়ে কষ্ট করে ওইসব জমিতে ধানের চারা রোপণ করলেও রোপণকৃত চারাগুলো পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে তা পচে নষ্ট হচ্ছে। পানিবন্দি থাকার ফলে ওই ৬ পাড়ার আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতীর গাছও মারা যাচ্ছে।
এছাড়া, বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই গ্রামের ভেতরে রাস্তাগুলো পানিতে দীর্ঘ সময় ধরে ডুবে থাকে। এর ফলে কৃষকদের উৎপাদিত ধান, আলু ও অন্যান্য কৃষি পণ্য হাট-বাজারে নিয়ে যেতে নানা সমস্যায় পড়তে হয় কৃষকদের। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ৬ পাড়ার বাসিন্দারা স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিলেও এখনো কোন সমাধান মেলেনি তাদের।
উপজেলার হারুনজ্ঞাগ্রামের সর্দারপাড়া পলাশ ও পুন্ডিতপাড়া সিরাজুলসহ অনেকেই বলেন, ৬ পাড়ার পানি নিষ্কাশনের জন্য সরকার নতুন করে ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা সেই ব্রিজ ও কালভার্টের মুখে মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে এলাকার কৃষি জমিগুলো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
খানপাড়ার শাহাজান আলি বলেন, বিঘা প্রতি প্রায় ১৬ হাজার টাকা খরচ করে দুই বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। সেই চারাগুলো ভালো হয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার ফলে ধানের চারাগুলো পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
ফকির পাড়ার মোয়াজ্জিম বলেন, জমিতে এ যাবৎ দু'বার ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। সেই চারাগুলো পচে নষ্ট হয়েছে। বর্তমান আমি অশান্তিতে আছি।
মন্ডলপাড়ার রেজাউল বলেন, বর্তমানে জমিতে জলাবদ্ধতা থাকায় আমন ধান রোপণ করতে পারিনি। প্রায় ৩ বছর ধরে এতো সমস্যা পরেও বিষয়টি কেউ কোন সুরাহা করছেনা।
সাগিদাপাড়ার ভোলা হোসেন বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কারণে বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই দীর্ঘ সময় ধরে ওইসব পাড়ার ভেতরে পানি জমে থাকে। রাস্তাগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে কৃষি পণ্য হাট-বাজারে নিয়ে যেতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আজগর আলি বলেন, এই এলাকার ভুক্তভোগীরা কয়েক মাস আগে দরখাস্তের মাধ্যমে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো কোন সমাধান মেলেনি।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান বলেন, ওই এলাকার জমিগুলো নিচু। একটু বৃষ্টি হলেই বৃষ্টির পানিতে জমিগুলো ডুবে যায়। জমি থেকে পানি বের হওয়ার জায়গাগুলো সব বন্ধ করে দেওয়ার ফলে কিছু জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন পারভেজ মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি জানার পর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখে-শুনে আসার পর তার সঙ্গে কথা বলেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-টিআই/এমএ