শরীরে জ্বর নিয়ে যুবকের মৃত্যু
Published : Sunday, 29 March, 2020 at 10:03 AM Count : 322
নওগাঁর রাণীনগরে ঢাকা থেকে শরীরে জ্বর নিয়ে আসা এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত আল আমিন (২২) রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের অলংকার দীঘি গ্রামের মোকলেছুর রহমানের ছেলে।
আল আমিনের মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে এলে গ্রামের কোন লোকজন করোনা ভাইরাস সন্দেহে তার মৃতদেহের কাছে যায়নি। কিন্তু আল আমিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না সেই পরীক্ষা কোন হাসপাতালের চিকিৎসকরা করে নি কিংবা কোন নমুনাও সংগ্রহ করেনি।
আল আমিনের বাবা মকলেছুর রহমান মুঠোফোনে জানান, আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। শুক্রবার রাতে আল আমিন গায়ে প্রচন্ড জ্বর আর কাশি নিয়ে খুব অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা থেকে নওগাঁর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শনিবার সকালে বাড়িতে আসার সময় সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে স্থানীয় মেম্বার ও গ্রামের কতিপয় লোকজন তাকে গ্রামে উঠতে দেয়নি।
ফলে বাধ্য হয়ে সকালেই এলাকার ভেটি স্ট্যান্ড থেকে চিকিৎসার জন্য আদমদীঘি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোন চিকিৎসা না করেই ফিরিয়ে দেয় চিকিৎসকরা। এরপর আবারও ছেলেকে ফিরে নিয়ে ভেটি কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে আসি। সেখানে চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা না করেই বারান্দায় আল আমিনকে রাখা হয়।
পরে স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে পরে তার সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য প্রথমে রাণীনগর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেখানে করোনা সন্দেহে চিকিৎসকরা নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠায়। নওগাঁ হাসপাতালে পৌছার পর সেখানেও আল আমিনকে ভালো ভাবে না দেখে কোন চিকিৎসা না দিয়েই রাজশাহী নিয়ে যান বলে হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়।
এরপর, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কিছু ওষুধ ও ইনজেকশন লিখে দিয়ে চলে যান চিকিৎসকরা। সেগুলো দিয়েও আমার ছেলের শরীরের জ্বর কোন ভাবেই কমেনি। এরপর কোন চিকিৎসক আমার ছেলের আশপাশে আর আসেনি। অবশেষে আমার ছেলে করোনা ভাইরাস সন্দেহে মারা গেলো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু বলেন, ছেলেটা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এমন খবর পাওয়ার পর তার পরিবারকে বলেছি চিকিৎসকের প্রতিবেদন নিয়ে গ্রামে আসতে। যদি চিকিৎসকরা বলেন আল আমিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয় তাহলে আমাদের কোন সমস্যা নেই। আর যদি সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসা করান। গ্রামে আসার দরকার নেই। গ্রামবাসী ও আশপাশের মানুষের কথা ভেবেই আল আমিনকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে এইচ এম ইফতেখারুল আলম খাঁন (অংকুর) বলেন, আল আমিনের শরীরে ১শ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি জ্বর ছিলো। তাকে যখন আমরা হাসপাতালে পাই তখন সে অবচেতন অবস্থায় ছিলো। যেহেতু তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো সেহেতু আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, মৃত আল আমিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার কথা বলবো। তবে সে হয়তো বা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। এছাড়াও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আল আমিনের দাফন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামান বলেন, যেহেতু নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই সেহেতু আমরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি।
-এমএ