For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

কুবি ব্যায়ামাগার 'পাহারা দেয়' ছাত্রলীগ!

Published : Tuesday, 14 January, 2020 at 3:36 PM Count : 353

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যায়ামাগার এখন অনেকটাই শাখা ছাত্রলীগের অঘোষিত 'দলীয় কার্যালয়'। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সরাসরি কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নিজেদের ইচ্ছেমতো খুলে এখানে বসেই নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম চালান শাখা ছাত্রলীগের নেতারা।

তবে দলীয় অফিস নয় বরং ব্যায়ামাগারটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিয়মিত পাহারা দিয়ে দেখভাল করেন বলে দাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের।

যদিও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যোগদানের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পূর্বে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এটিকে ‘দলীয় কার্যালয়’ বলেই উল্লেখ করেছিলেন।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের উত্তর পাশে অবস্থিত ব্যায়ামাগারটি উদ্বোধন করেন। প্রায় ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৭টি ব্যায়ামের যন্ত্র কেনা হয়।
কিন্তু উদ্বোধনের কিছুদিন পরই শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ ব্যায়ামাগারটিতে নিজেদের দলীয় স্টিকার সম্বলিত টেবিল এবং চেয়ার বসালে ব্যায়ামের জায়গা আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। 

ব্যায়ামাগারটির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ব্যায়ামাগারের একপাশে ছাত্রলীগ নেতাদের বসার জন্য চেয়ার-টেবিল বসানো। শাখা ছাত্রলীগের পদধারী কয়েকজন ব্যায়ামাগারের ভেতর বসিয়েছেন আড্ডা, চলে ধূমপানও।

এ কারণে ব্যায়ামাগারে জায়গা সংকটসহ এখানে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

ব্যায়ামাগারের সুবিধাবঞ্চিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম ইনজামাম জানান, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি একটি ব্যায়ামাগার খোলা হলেও সেখানে প্রশাসনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই। পর্যাপ্ত জায়গাও নেই ব্যায়ামাগারে। কুবির ব্যায়ামাগার একটি নামমাত্র প্রতিষ্ঠান।'

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, ব্যায়ামগারটি প্রায়শই তালাবদ্ধ থাকে। যার চাবি থাকে শুধুমাত্র শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের কাছেই। ছাত্রলীগ নেতাদের ইচ্ছামতো এটি খোলা এবং বন্ধ করা হয়। প্রায় সময়ই নেতারা ভেতরে বসে আড্ডা দেন এবং দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের কারও হাতে নেই এর চাবি বা নিয়ন্ত্রণ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক মনিরুল আলম বলেন, 'প্রশাসন থেকে ব্যায়ামাগার পরিচালনার কোন নির্দেশনা বা চাবি আমাকে দেওয়া হয়নি। আমাকে শুধুমাত্র এর জিনিসপত্র কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। আমি বাজেটের আলোকে তা কিনে দিয়েছি। কে, কিভাবে ব্যায়ামাগার চালাচ্ছে আমার জানা নেই।'

গত ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ব্যায়ামাগারের সামনে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ছাত্রলীগের দলীয় পতাকা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকতা পালন করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি থেকে শুরু করে অনেক নেতাকর্মীকে ব্যায়ামাগারটিকে 'দলীয় কার্যালয়' উল্লেখ করে প্রচার করতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এক শিক্ষার্থী জানান, 'এমনিতেই গাদাগাদি এবং তার ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যায়ামাগারে কর্তৃত্ব দেখে আর ওখানে যাওয়ার আগ্রহ হয়না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগার কোন রাজনৈতিক সংগঠনের অফিস কিভাবে হয় তা আমার বোধগম্য নয়।'

অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, 'এটা আসলে আমাদের অফিস না, বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামও (ব্যায়ামাগার) না। আমরা কিছু ছেলে আবেদন করে জিমের কিছু জিনিসপত্র আনিয়েছি প্রশাসন থেকে। এটা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তার কাজের লোকদের লেবার শেড হিসেবে তৈরি হয়েছিল। পরে আমরা এটাকে জিম করে দিতে বলেছি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই আসে, খেলে, ব্যায়াম করে। আর আমরা এটা পর্যায়ক্রমে নিজেদের ছেলেদের দিয়ে পাহারা দিয়ে রাখি। না হয় জিমের জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাবে।'

ব্যায়ামাগারের জিনিসপত্র পাহারার দায়িত্ব ছাত্রলীগের কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর জন্য লোক দেয় না বলেই আমরা এটা নিজেরা পাহারা দেই। এটি বাংলাদেশের একমাত্র জিমনেশিয়াম যেটা আমাদের পাহারা দেওয়ার জন্য এর কোন জিনিস হারায়নি। প্রশাসনের লোক না থাকায় আমরা নিজেরা নিজেদের জিনিস দেখে রাখছি।'

যখন তখন ব্যায়ামাগার বন্ধ করে রাখেন এবং খোলেন, এতে করে শিক্ষার্থীরা কিভাবে ব্যায়াম করতে পারে? - এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি একই সুরে জানান, 'আমরা ২৪ ঘন্টা খুলে দিয়ে চলে গেলে তো জিনিসপত্র চুরি যাবে।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'ব্যায়ামাগারকে ছাত্রলীগ তাদের অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না। এটা শারিরীক শিক্ষা দপ্তরের দায়িত্বে থাকবে। ব্যায়ামাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর। এটি সবাই ব্যবহার করবে সমভাবে। এর ব্যত্যয় হয়ে থাকলে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।'

-এসবি/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,