For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

১৫ বছরেও লাঘব হয়নি যে যন্ত্রণা

মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি নিহত আহত স্বজনদের

Published : Tuesday, 20 August, 2019 at 9:02 PM Count : 259


২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে ছোড়া গ্রেনেডে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৪ জন, যার চারজনই মাদারীপুরের।উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে সেই নিহতদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে জীবনযাপন করছে দৈন্যদশায়। অন্যদিকে আহতদের বেশিরভাগ কর্মক্ষমতা হারিয়ে হয়ে পড়েছেন পরিবারের বোঝা। হামলায় আহত চারজন এখনো শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন বোমার স্পিন্টার। দীর্ঘদিন এসব স্পিন্টার শরীরের বিভিন্ন স্থানে থাকায় চিকিৎসার অভাবে শরীরের একেকটি অংশ হয়ে পড়ছে অকেজো। সুচিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন তারা। বিচারের দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও আহতদের চিকিৎসাসহ পুনর্বাসন ও নিহতদের পরিবারগুলোর জন্য সাহায্য-সহযোগিতার তেমন কোনো উদ্যোগ না দেখে তাদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা ও ক্ষোভ।তবুও নিহত ও আহত পরিবারগুলোর দাবী মামলার রায় অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।

আওয়ামী লীগের সমাবেশে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মেয়ের প্রথম জন্মবার্ষিকীর পোশাক আর মায়ের পেটের পাথর অপারেশনের ব্যবস্থা করে বাড়ি ফেরার কথা বলে ঢাকায় গিয়েছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামেরআইয়ুব আলীর ছেলে লিটন মুন্সি। লিটন মুন্সি হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা ছিলেন।

ছেলেকে হারানোর ১৪ বছর পরের দিনটিতে চানপট্টি গ্রামের বাড়িতে লিটনের মা আছিয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার বাবা বলেছিল, মা তোমার পেটের পাথর অপারেশনের ব্যবস্থা করে আসব, মাত্র ১০ দিন অপেক্ষা কর। নয়দিনের মাথায় বাবা লাশ হয়ে ফিরেছে।”

নিহত লিটন মুন্সীর স্ত্রী মাফিয়া আক্তার জানান, আগামী ১ সেপ্টেম্বর আমাদের সন্তান মিথিলার বয়স ১৫ বছর পূর্ণ হবে। ২০০৪ সালে মিথিলার প্রথম জন্মদিন উপলক্ষে জামা-কাপড় নিয়ে তার বাবার মাদারীপুর শহরে ফেরার কথা ছিল। মিথিলার জন্মদিনের পোষাক আর তার আনা হয়নি।

লিটনের বাবা আইয়ুব আলী মুন্সি বলেন, “আমার ছেলের তো কোনো দোষ ছিল না। আমার একমাত্র ছেলেকে কবরে শুইয়ে রেখে কিভাবে বেঁচে আছি বলতে পারেন?”

শুধু লিটন মুন্সি নয়, ওইদিন মাদারীপুরের আরও তিনজন নিহত হন। তারা হলেন- শ্রমিক লীগ নেতা নাসিরউদ্দিন। তার বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামপোল গ্রামে।

নাছিরউদ্দিন থাকতেন ঢাকার হাজারীবাগে। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এক সময়ে হাজারীবাগের শ্রমিক লীগের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঢাকায় কখনও রিকশা চালাতেন, কখনও নুর হোসেন নামের একজন সরকারী কর্মকর্তার দোকানে বসতেন। নাসির ছিল আওয়ামী লীগের অন্ধভক্ত। তাই আওয়ামী লীগের মিছিল, মিটিং, কিংবা সমাবেশ হলে তাকে কেউ বেঁধে রাখতে পারত না। মিটিং, মিছিলের আগে থাকতো, শ্লোগান দিতেন। বঞ্চনার বিরুদ্ধে সেই প্রতিবাদী কন্ঠ আর শোনা যাবে না। রাজনীতির জন্য যে জীবন উৎসর্গ করল। সেই নাসিরউদ্দিনের বৃদ্ধ মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তানদের খবর কেউ রাখে না।
গ্রেনেড হামলায় নিহত অপর যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু। সেন্টুর বাড়ি কালকিনি উপজেলার ক্রোকিরচর গ্রামে। নিহত সেন্টুর স্ত্রী আইরিন পারভীন বলেন, ‘ওকে হারিয়ে আমরা পথে বসে গেছি। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমভাবে বেঁচে আছি।’

মাদারীপুরের নিহতদের মধ্যে চতুর্থজন সুফিয়া বেগম। তার বাড়ি রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামে। ওইদিন মহিলা নেত্রীদের সঙ্গে প্রথম সারিতেই ছিলেন সুফিয়া। চঞ্চলা ও উদ্যমী সুফিয়া সপরিবারে ঢাকায় থাকতেন।

ওইদিনের গ্রেনেড হামলায় কালকিনি পৌরসভার বিভাগদী গ্রামের মোহাম্মাদ আলী হাওলাদারের ছেলে হালান হাওলাদারের একটি পা গ্রেনেড হামলায় নষ্ট হয়ে গেছে। আজীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে তাকে। বর্তমানে তিনি ঢাকায় থাকেন। ফেরি করে রাস্তায় রাস্তায় মুরগী বিক্রি করে। স্ত্রী ও পাঁচ বছর বয়সের ছেলে রিয়াদকে ঠিকমত খাবার, পোশাক দিতে না পারায় তারা বেশির ভাগ সময় স্ত্রীর বাবার বাড়িতেই থাকেন। মা মনোয়ারা বেগম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

হালান হাওলাদার বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট অনেক শখ করে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে যাই। পরে সেখানে বোমা হামলায় আহত হই। এখনও দুই হাত-পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০ এর বেশি স্প্রিন্টার যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। এভাবে জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব। এর চেয়ে মৃত্যুই ভালো ছিল।

বর্তমানে ঢাকায় থাকা হালান হাওলাদার ফেরি করে রাস্তায় রাস্তায় মুরগি বিক্রি করেন। স্ত্রী ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলের খরচ ঠিকমত দিতে না পারায় তারা বেশিরভাগ সময় স্ত্রীর বাবার বাড়িতেই থাকে। মা মনোয়ারা বেগম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

কালকিনির ঝাউতলা গ্রামের ওয়াহেদ সরদারের ছেলে সাইদুল হক সরদার শরীরে স্পিন্টার নিয়ে যন্ত্রণাময় জীবনযাপন করছে। বাঁচার তাগিদে কোনো কাজ-কর্মে ভালো কিছু করতে না পেরে জমি বিক্রি করে চার বছর আগে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখানেও শরীরে স্পিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে কিছু করতে পারেনি, ফিরে আসতে হয়েছে দেশে।

সাইদুল বলেন, ‘একটি চাকরির জন্য অনেক জায়গায় ঘুরেছি, বিভিন্ন নেতাকর্মীর কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। কেউ সাহায্য করেনি।’ গ্রেনেড হামলায় ডান হাত বাঁকা হয়ে গেছে কালকিনির কৃষ্ণনগর গ্রামের কবির হোসেনের। ঢাকার এক বস্তিতে থেকে এখন দিনমজুরের কাজ করেন তিনি।

আর সেদিন চোখ হারিয়ে এখন স্ত্রীর আয়ের উপর চলছেন মাদারীপুর সদরের ছিলারচর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুরামপুর গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ। তার স্ত্রী গোবর দিয়ে জ্বালানি বানিয়ে বিক্রি করে সংসার চালান। ভালোভাবে খেয়েপরে বাঁচতে চাওয়ার পাশাপাশি এতো সব দুর্ভোগের পেছনে দায়ী হামলাকারীদের বিচারে শিগগিরই মামলার রায়ের কার্যকারিতা দেখতে চায় তারা। কারণ আহত প্রত্যেকের স্মৃতিতে সেদিনের নারকীয় দৃশ্য আতঙ্ক হয়ে আছে।

এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,