সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ডায়া ঘনাপাড়া গ্রামে ২৮ লাখ ব্যয়ে একটি এবং এই সেতু থেকে মাত্র দুইশত গজ দূরে প্রায় সমপরিমাণ অর্থে ডায়া মোহন মাষ্টারের বাড়ীর পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। অথচ ৩ বছরেও এ সেতুর দুই পাশে কোন সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। সংযোগ সড়কের অভাবে সেতুটি চলাচলের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
তবে সেতুতে উঠতে মই ব্যবহার করে সেতুতে এলাকাবাসী এখন গোবরের ঘোষি, ভেজা কাপড়, লেপ, তোষক, কাঁথা-বালিশ, চট, ছালা, পলিথিন কাগজ শুকানোর কাজে ব্যবহার করছেন। এজন্য তারা সেতুটি সাথে মই লাগিয়ে নিয়েছে।
এই সেতু দুটির সংযোগ সড়ক নেই। সেতু দুটি প্রায় তিন বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।এছাড়া এমন সেতু রয়েছে যার দুদিকে কোন রাস্তাই নেই। আবার অনেক সেতুর এক দিকে রাস্তা রয়েছে অপরদিকে রয়েছে ফসলি জমি। অনেক সেতুর পায়ে চলার মতো করে সংযোগ সড়ক দেয়া হয়েছে আবার ১০০ফিট খালের উপর ২০ফিট সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সংযোগ সড়ক ছাড়া ব্রিজ নির্মাণের নিয়ম না থাকলেও এরকম অনেক সেতু রয়েছে যা একে বারেই অপরিকল্পিত ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ত্রাণ ও পুনবাসন মন্ত্রনালয় কর্তৃক নির্মিত কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অধিকাংশ সেতুগুলো এলাকাবাসীর কোন কাজেই আসছে না।
শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের কাদাই হাট খোলার দক্ষিণ পাশে ও পূর্ব পাড়ায় দুটি সেতু, জালালপুর ইউনিয়নের সড়াতল ও বিশ্বনাথপুর গ্রামে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাদাই গ্রামে, পাইকপাড়া, বাগবাটি ইউনিয়নের ফুলকোচাসহ জেলায় নির্মিত অধিকাংশ ব্রিজের সংযোগ সড়ক নেই। আবার কোন কোন সেতুর কোন রকমে পায়ে চলার মতো করে সংযোগ সড়ক দেয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় আবারও একই ধারায় জেলায় এই ধরনের আরো ৩২টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। যা জনসাধারনের খুব একটা উপকারে আসবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুর্যোগ ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় জেলায় প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৮টি সেতু নির্মাণ করা হয় কিন্তু তিন বছর ধরে এই সকল বেশীর ভাগ সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুগুলো ব্যবহার করতে পারছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। যার কারণে সেতুগুলো প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে সেতুগুলো এলাকাবাসীর কোন কাজেই আসছে না।
এই অবস্থায় দুর্যোগ ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রণালয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলায় ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো ৩২টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ৭টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে শাহজাদপুরে এতে ব্যয় করা হবে ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
শাহজাদপুর ডায়া ঘোনাপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেক, মনজেল হোসেন ও ফখরুল ইসলাম জানান, সংযোগ সড়কের অভাবে সেতুতে চলাচলের সুযোগ না থাকায় এলাকাবাসী এখন গোবরের ঘোষি, ভেজা কাপড়, লেপ, তোষক, কাঁথা-বালিশ, চট, ছালা শুকানোর কাজে ব্যবহার করছে। এজন্য তারা সেতুটির উত্তরপাশে একটি কাঠের মই স্থাপন করে নিয়েছে। তারা অবিলম্বে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জোর দাবি জানান।
এ ব্যাপারে হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সরকার বলেন, এলাকাবাসী মাটি না দেয়ার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়নি। আগামী সেশনে কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে শ্রমিক দিয়ে সেতুটির সংযোগ সড়ক তৈরী করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এটা সম্ভব না হলে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সেতুতে সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিন্দার আলী বলেন, ডায়া ঘোনাপাড়া গ্রাম এলাকায় সেতু দুটিতে সংযোগ সড়ক না থাকায় গত ৩ বছর ধরে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বলে শুনেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে সংযোগ সড়ক নির্মাণে অচিরেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা ত্রাণ ও পুনরবাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, গ্রামের সাধারন মানুষের সুবিধার জন্যই ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ব্রিজগুলো স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সুপারিশে নির্মাণ করা হয়েছে করা হয়েছে। তবে চলতি বছরে নির্মিত ব্রিজগুলো সঠিকভাবে যাচাই করে প্রয়োজন দেখে নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন। এছাড়া তিনি বলেন, যদি কোন ব্রিজের সংযোগ সড়ক না থেকে থাকে তাহলে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এবি/এইচএস