১৬ ডিসেম্বর কাজের চাপ নেই, তবু বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতায় যেতে হবে কারখানায়। একটু ঢিলেঢালাভাব নিয়ে কয়েকজন কারখানা শ্রমিক সকালে আড্ডা দিচ্ছিলেন শালনা মোল্লাপাড়া এলাকার মোড়ে। তাদের পুরো কথাই চলছিল নির্বাচন নিয়ে।
হানিফ নামের এক শ্রমিক বলছিলেন, এবার খুব কঠিন নির্বাচন হবে তাঁর পাশ কাটিয়ে রহিম নামের একজন বলল, দূর মিয়া কিসের নির্বাচন, আমরা তো ভোট দেয়ার সুযোগও পাব না, সকালেই দেখবে বাক্স ভরে রয়েছে। তবে সঙ্গে থাকা চা দোকানি সিরাজ মিয়া জানান, দিন যত যাবে পরিবেশ ততই ভালোর দিকে যাবে, আর আমরাও সুষ্ঠু ভোটের আশাবাদী কেননা বঙ্গবন্ধু কন্যা যতই প্রতিকূলতাই হোক তিনি তাঁর কথা রাখবেন। এভাবেই কথা চলছিল প্রায় ঘণ্টাব্যাপী।
বাংলার প্রকৃতিতে শীতের আনাগোনা শুরু হয়েছে দুইদিন হয়ে গেল। তবে এবার ভোটের বাদ্যের শব্দে তাঁর কোন প্রভাবই ফেলতে পারেনি কারো মাঝে। চায়ের স্টলগুলোতো ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নির্বাচনী নানা কথামালার ফুলঝুড়ি। প্রতিনিয়ত চায়ের কাপের বাস্পের মতই ছড়াচ্ছে নির্বাচনী উত্তাপ। যে উত্তাপ লক্ষ্য করা গেল গাজীপুর সদর আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে। আর সিংহভাগ শ্রমিক ভোটারদের মধ্যেও এখন চলছে ভোট ভাবনা। কেননা তাদের রায়ের উপরই নির্ভর করছে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়।
গাজীপুর-২ আসনটি সিটি এলাকার ১৯-৩৮ ও ৪৩-৫৭ মোট ৩৫ ওয়ার্ড ও গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত। ভোটার সংখ্যার দিক দিয়ে জেলার সবচেয়ে বড় আসনে মোট ভোটার ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪১ জন। শিল্প এলাকা সমৃদ্ধ এই আসনের সিংহ ভাগ ভোটারই কারখানা শ্রমিক। দশম সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বর্তমান সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল নির্বাচিত হয়েছিলেন। নবম ও অষ্টম সংসদে উপনির্বাচনে ও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে অষ্টম ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার। যদিও ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান।
এই আসনে শ্রমিক শ্রেণীর ভোটারের আধিক্য থাকায় দলগুলোর মনোনয়নে প্রতিবারই শ্রমিক নেতাদেরই আধিক্য দিয়েছে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হলে তাঁর ইমেজকে ধরেই প্রতিবারই বিজয়ী হয়ে আসছেন তাঁর ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল। এখানে বিএনপিও তাদের কয়েকজন হেবিওয়েট প্রার্থী থাকার পরও তারা শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। সবারই উদ্দেশ্য শ্রমিকদের ভোট আদায় করা। কারণ শ্রমিকরাই গড়বেন জয়-পরাজয়।
ইপসা এলাকার কনকর্ড গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক হোসনে আরা বলেন, গন্ডগোল অইলে আমরা ভোট দিতে যামু না, আগে পরিবেশটা দেখি তার পর সিদ্ধান্ত নিমু”।
একই কারখানার শ্রমিক আনোয়ারা বলেন,আমরা কারখানা শ্রমিকরা খুবই অবহেলিত, আমাদের কথা কেউ ভাবেনা। তাই যাদের কাছ থেকে নিরাপদ কর্মপরিবেশের আশ্বাস পাব তাদের ভোট দেব।
বোর্ড বাজার এলাকার নাহার গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক আজিজুল হক বলেন, দীর্ঘদিন পর ভোটের উৎসবে ভাসছে দেশ, এটা অনেক আনন্দের। তিনি এবারই প্রথম ভোট দিবেন, তাই অনেক ভেবে চিন্তে দিবেন। এই আসনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের জাহিদ আহসান রাসেল, বিএনপির সালাউদ্দিন সরকার, ইসলামী আন্দোলনের হারুনুর রশিদ, বাসদের আব্দুল কাইয়ুম, সিপিবির জিয়ায়ুল কবির, মুসলিম লীগের সৈয়দ আব্দুল হান্নান নুর। যদিও মূল লড়াই হবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, এই আসনের অধিকাংশ এলাকা শিল্পকারখান বেষ্টিত থাকায় প্রশাসনের বিশেষ নজরে রয়েছে। বিভিন্ন প্রার্থীরা প্রতিদিনই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, এখানে এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এফএ/এইচএস