আজ ৪ ডিসেম্বর। লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনারা এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদরের সহায়তায় লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণসহ শত শত নিরীহ জনসাধারণকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। তখন লক্ষ্মীপুরের দামাল ছেলেরা ১৭ বার সম্মুখ যুদ্ধে মুখোমুখি হয়ে হানাদারদের প্রতিহত করে আজকের এই দিনে লক্ষ্মীপুরকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন ৯ মাসে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর ১৭টি সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। এসব যুদ্ধে সৈয়দ আবদুল হালীম বাসু, মনছুর আহমদ, আবু ছায়েদ, আবুল খায়ের, নজরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, আতিক, মোস্তাফিজুর রহমান, আলী আহাম্মদ (ইপিআর) সহ ৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
এছাড়াও, এই জেলায় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে আরও জানা অজানা অসংখ্য নারী-পুরুষ শহীদ হয়। ডিসেম্বরের এ দিন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরীর এবং সুবেদার প্রয়াত আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার, দক্ষিণ হামছাদী, শাখারী পাড়ার মিঠানীয়া খালপাড়সহ বাগবাড়ীস্থ রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে লক্ষ্মীপুরকে হানাদার মুক্ত করেন এবং প্রায় দেড় শতাধিক রাজাকারকে আটক করে ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেন।
প্রকাশ্যে লক্ষ্মীপুর শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাক হানাদার ও এই দেশীয় রাজাকারদের এসব নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী হয়ে আজও আছে শহরের বাগবাড়ীস্থ গণকবর, টর্চারসেল, মাদাম ব্রীজ বধ্যভুমি, পিয়ারাপুর ব্রীজ, বাসু বাজার গণকবর, চন্দ্রগঞ্জ, রসুলগঞ্জ ও আবদুল্যাপুর এবং রামগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমি।
সদর উপজেলার দালাল বাজারের শহীদ আলী আজমের ভাই শাহজাহান জানান, তাদের মতো যেসব পরিবারের লোকজনদেরকে রাজাকার, আল বদররা অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। সেসব পরিবারের দাবি, যেসব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে তাদের মত অন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার খুব দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার নুরেরজ্জামান মাষ্টার বলেন, মহান স্বাধীনতার এত বছর পরও এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়ায় আজও সে স্মৃতি মনে করে প্রিয়জনদের হারানোর ঘটনায় শিহরে উঠেন অনেকে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজাকারদের বিচার শুরু করে এবং র্শীষ স্থানীয় রাজাকারদের বিচার করে ফাঁসির রায় কার্যকর করায় বাংলাদেশ কলঙ্ক মুক্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগে সকল মানবতারিরোধীদের বিচার করে ফাঁসির রায় কার্যকর করে বাংলাদেশকে একটি মানবতাবিরোধী অপরাধীমুক্ত দেশ উপহার দেবে বর্তমান সরকার।
তিনি আরও বলেন, হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
-আরআইকে/এমএ