বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন সংকট আরও কঠিন, আরও ভয়াবহ হয়েছে।
শুক্রবার রাজশাহী আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘পথে পথে শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আপনারা গণতন্ত্রের জন্য এখানে এসেছেন। এখন সংকট আরও কঠিন, আরও ভয়াবহ। আজকে প্রশ্ন, গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। আমাদের কথা বলার অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে কি না, তা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এই স্বৈরাচার সরকার আটকে রেখেছে। তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল, সেখান থেকে তাঁকে জেলখানায় নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। তারা পুলিশ দিয়ে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে মানুষকে গণতন্ত্রের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে বাংলাদেশের মুক্তি জন্য লড়াই করছি। সে জন্য আমরা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তারা তা করেনি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, তাই সংলাপ সফল হয়নি। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলেন বলে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি, এবারও তাঁকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে ২০ দলীয় জোটভুক্ত লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এই প্রথম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় অংশ নিয়েছেন। জনসভায় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, খালেদাকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আজকের জনসভায় বিএনপির যে পরিমাণ নারী কর্মীর উপস্থিতি রয়েছে, তা যদি আমার দলে থাকতো তাহলে তিন দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে ফেলতাম।
সমাবেশে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, আমাদের উসকানি দেবেন না। ৭ দফা না মানলে দেশে নির্বাচন হবে না।’
এই সমাবেশে শারীরিক অসুস্থতার কারণে গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন যোগ দেননি। তবে তিনি মোবাইল ফোনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। গণফোরাম থেকে সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ দলের অন্য নেতারা সমাবেশে যোগ দেন।
ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু প্রমুখ।
দুপুর আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হলেও জুমার পর থেকে নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন।
প্রসঙ্গত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহীতে এটি চতুর্থ সমাবেশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
তার আগে ২৪ অক্টোবর সিলেটে ও ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এইচএস