For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রুয়েটে দুর্নীতির ১৫ বছরের ‘দুষ্টচক্র’ এবার দুদকের জালে

Published : Sunday, 29 September, 2024 at 3:52 PM Count : 113

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কোন কাজ কোন ঠিকাদারকে দিতে হবে, তা নির্ধারণ করে দেন একদল কর্মকর্তা। ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে তারা বুঝে নেন কমিশন।

এদিকে, কর্মকর্তাদের খুশি রেখে ঠিকাদাররাও কাজ করেন নিজেদের ইচ্ছেমতো। পরে কাজ নিয়ে কোনো কর্মকর্তা আপত্তি তোলেন না বলে ঠিকাদাররা বিলও বুঝে পান দ্রুত সময়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রুয়েটে যতজন উপাচার্য এসেছেন, সবাই থেকেছেন এই কর্মকর্তাদের কবজায়। এই সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করেছে রুয়েটের সবকিছু।

এবার রুয়েটের এই ‘দুষ্টচক্র’-এর দিকে নজর দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একটি নতুন বিভাগ চালুর প্রকল্পে দুর্নীতি খুঁজতে গিয়ে দুদক এই দুষ্টচক্রটিকে খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে নয় জনকে চিঠি দিয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি। 

চিঠিতে তাদের ‘অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন গত ২২ সেপ্টেম্বর এ চিঠি ইস্যু করেন।
রুয়েটের রেজিস্ট্রারের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে দুদক যাঁদের তলব করেছে তাঁরা হলেন- সহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবীব, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) শাহাদাৎ হোসেন, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (ইলেকট্রিক) অমিত রায় চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত কম্পট্রোলার নাজিম উদ্দিন আহম্মদ, ডেপুটি কম্পট্রোলার ফয়সাল আরেফিন, ডেপুটি নিরীক্ষা কর্মকর্তা মেসবাউল আরেফিন এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী রেজিস্ট্রার মুক্তার হোসেন, আব্দুর রায়হান ও আতিকুর রহমান। 

মুক্তার হোসেন, আব্দুর রায়হান ও আতিকুর রহমান আগে অডিটর ছিলেন। ফয়সাল আরেফিন ও মেসবাউল আরেফিন আপন দুই ভাই। অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবীব রুয়েট অফিসার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

রুয়েট সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ বছরে রুয়েটে যতজন উপাচার্য এসেছেন তাঁরা সবাই শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি থেকেছেন। সবশেষ গত বছরের আগস্টে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ড. জাহাঙ্গীর আলম দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েও নিজেকে দুর্নীতির দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত রাখতে পারেননি। জাহাঙ্গীর আলম যোগ দেওয়ার পর দরপত্রের গোপন প্রাক্কলিত দর পছন্দের ঠিকাদারকে জানিয়ে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয় রুয়েট। সেই তদন্তে দর ফাঁস করার অভিযোগের সত্যতা মেলে। কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আটটি কাজের দরপত্র বাতিল করা হয়। অবশ্য শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলম।

‘দুষ্টচক্রের’ সন্ধান পাওয়া গেল যেভাবে
রুয়েটের ২৬ কোটি টাকার একটি উপপ্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে দুষ্টচক্রের খোঁজ পেয়েছে দুদক। এই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক টাকাই আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালুকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত ও ল্যাবরেটরি সুবিধা সৃষ্টিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রুয়েটে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু করার প্রকল্পে এই দুর্নীতি হয়।

রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১ জুলাই ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করেন মোট পাঁচ জন। সবশেষ প্রকল্প পরিচালক ছিলেন রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলীম। প্রকল্প চলাকালে তিনি রুয়েটের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক ছিলেন। দুষ্টচক্রের সহায়তায় তিনিই প্রকল্পে লুটপাট চালান।

নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হলে ০৯ আগস্ট আব্দুল আলীম প্রকল্প শেষ হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) প্রতিবেদন পাঠান। এতে তিনি প্রকল্পের বরাদ্দের ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকার সবই ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তবে ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ যে দিন শেষ হয়, সে দিনও প্রকল্পের ব্যাংক হিসাবে ছিল ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ২৭২ টাকা। এরপর ২০১৭ সালের ১ মার্চ ছিল ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা। ধীরে ধীরে ব্যাংকের টাকা কমতে থাকে। ২০২০ সালের ৩০ জুন ব্যাংকে ছিল মাত্র ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৯ টাকা। প্রকল্প শেষেও বেঁচে যাওয়া প্রায় ১৩ কোটি টাকা নয়-ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পায় ইউজিসি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ওই প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল আলীমকে গত বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে জ্যেষ্ঠ সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রায়হান বলেন, দুদক ডেকেছিল ‘সম্পর্ক বিল্ডআপ’ করার জন্য।

আরেক অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবীব সিন্ডিকেটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রুয়েটে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি করতে একটা সিন্ডিকেট কাজ করত। তবে তিনি এর বাইরে ছিলেন বলে দাবি করেন।

-আরএইচ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,