বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমূখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো আদিবাসীদের কারাম পূজা ও উৎসব। বিপদ থেকে মুক্তি, অতিবন্যা ও খরা থেকে বাঁচতে দেশ ও মানুষের মঙ্গল কামনায় নেচে-গেয়ে ঐতিহ্যবাহী কারাম পূজা ও কারাম উৎসব উদ্যাপন করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের ওরাওঁ সম্প্রদায়।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের পাঁচ পীরডাঙ্গায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হয় ধর্মীয় ও এই সম্প্রদায়ের উৎসবটি।
এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসএ শাখা, এলএ শাখা এবং অর্পিত সেল) মোঃ খাইরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমীন, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (আরএম শাখা এবং আইসিটি শাখা) মোঃ তারেক হাসান তাহসিন, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা, ট্রেজারি শাখা এবং ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শাখা) পলাশ তালুকদার, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (গোপনীয় শাখা এবং ফরমস ও স্টেশনারী শাখা) মোঃ নাঈম আশরাফ, সালন্দর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী।
এ সময় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেউকেটার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা হিন্দু ফ্রন্টের সদস্য সচিব বিশ্বজিৎ কুন্ডু, ঠাকুরগাঁও রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বিশিষ্ট সমাজ সেবক খাদেমুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলা শাখা’র সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু রাম র্মুম।
এসময় আদিবাসী নেতৃবৃন্দ, প্রশাসেনর কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়সহ অন্যান্য জেলা থেকে আগত কারাম উৎসব দেখতে আসা মানুষেরা জানান, একই রঙের পোশাক পরে সারিবদ্ধভাবে গ্রামের নারী পুরুষরা ঢোলের তালে তালে কারামের নৃত্য পরিবেশন দেখে তারা আনন্দিত ও খুশি।
উৎসবে ঢাক-ঢোলের বাজনায় নাচে গানে আনন্দ উপভোগ করে আদিবাসীদের পরিবার ও স্বজনরা। সঙ্গে যোগ দেন শিশু কিশোররাও।
এ বিষয়ে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর এ ঐতিহ্যবাহী ও সামাজিক দিবসটি পালন করে এখনকার ওরাওঁ সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। তারা কারাম গাছের ডালকে তাদের রক্ষাকবচ মনে করে। তারা মনে করে গাছটির মাধ্যমে তাদের জীবন রক্ষা হয়। এজন্য প্রতি বছর তারা এ উৎসবটি পালন করে। সারারাত তারা নানা সংস্কৃতি পালনের পর বুধবার কারাম গাছটি ভাসিয়ে দেবে।
পূজা অর্চনা শেষে গ্রামের তরুণ-তরুণীরাসহ সব বয়সের নারী-পুরুষরা বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আবারও ঢাক-ঢোলের তালে নেচে-গেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কারাম বৃক্ষের ডাল নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দিয়ে এ বছরের মতো শেষ করেন কারাম উৎসব।
কারাম পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেরকেটা বলেন, আদিকাল থেকে আমরা কারাম পূজা করে আসছি। এ কারাম বৃক্ষকে পূজা করার মাধ্যমে আমরা মনে করি আমাদের সব বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে। এ পূজার মাধ্যমে দেশের মানুষের মঙ্গল হবে।
উল্লেখ্য, উৎসবের দিন ওরাওঁ সম্প্রদায়ের মানুষ উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। সেই ডাল তাদের স্থায়ী পূজামন্ডপে রেখে পূজা অর্চনা, নাচ-গান ও গল্প বলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। বাংলা আশ্বিন মাসের শুরুতে এ উৎসবকে ঘিরে ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষ নানা আয়োজনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল ও টাকা তুলে আতিথিয়েতা করা হয় আমন্ত্রিত অতিথি ও আত্মীয়-স্বজনদের। উৎসবটিকে ঘিরে আগে থেকে নানা প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন এ সম্প্রদায়ের মানুষরা। পরিবার আর আত্মীয়স্বজন নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কারাম একটি গাছের নাম। ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষ গাছটিকে পবিত্র এবং মঙ্গলের প্রতীক মনে করেন। এ উৎসবের মাধ্যমে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরবে বলে মনে করেন তারা।
এএ/এসআর