For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ঐতিহ্যের নগর রাজশাহীতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

Published : Friday, 13 September, 2024 at 6:49 PM Count : 1763



ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিখ্যাত বাণিজ্যিক হাব খ্যাত ‘বড়কুঠি’, ‘ঢোপকল’ থেকে শুরু করে বিশাল প্রত্নতত্ত্বে সমৃদ্ধ দেশের প্রথম ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর’ সবই আছে গ্রিন-ক্লিন-হেলদি মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র রাজশাহীতে। বদলে যাওয়া এ নগর এখন বৈচিত্র্যময় রূপের মাধুর্যে নানা নামে পরিচিতি পাচ্ছে। সমৃদ্ধ এই মহানগরীর পরতে পরতে নান্দনিক সৌন্দর্যের আভা।

শুধু মহানগর নয়; এর চারপাশে শাখা-প্রশাখার মতোই রাজশাহী জেলার ৯ উপজেলায় প্রত্নতত্ত্ব, পুরাকীর্তি, বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে ভরপুর। বরেন্দ্রের ছোট্ট এই ভূ-খণ্ড ‘স্মার্ট সিটি’র বার্তা নিয়েই পর্যটনে অপার সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ হচ্ছে। এ মহানগরী একই সঙ্গে বিভিন্ন নামে পরিচিতি পেয়েছে।
এর মধ্যে রেশম নগরী, শিক্ষা নগরী, আমের রাজধানী, শান্তির নগরী, সবুজ নগরী, ক্লিন সিটি, ওলি-আওলিয়ার নগর, আলোর নগর, মিনি ইউরোপ, স্মার্ট সিটি অন্যতম। কমিউনিটি ট্যুরিজমের মাধ্যমে এ অঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনাকে নতুন দিগন্তে নেয়ার নানা পরিকল্পনার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রত্নতত্ত্ব: দেশের প্রত্নতত্ত্বের সবচেয়ে বড় নিদর্শন ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর’। যেটি মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র হেঁতেম খাঁ এলাকায় অবস্থিত। গৌরবের শতবর্ষ পার করা এই পুরোনো জাদুঘরটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। সমৃদ্ধ এই সংগ্রহশালাটি রাজশাহী তথা দেশের গর্ব। বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজা, সমসাময়িক জ্ঞানী-গুণী ও পণ্ডিতজন এখানকার নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎকুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। এ জাদুঘরে প্রস্তর ও ধাতব প্রত্নভাস্কর্য, টেরাকোটা, মুদ্রা ও পাণ্ডুলিপি, মৃৎপাত্র ও পোড়ামাটির ফলক, অস্ত্রশস্ত্র, আরবি ও ফারসি দলিলপত্র, চিত্র, ধাতবসামগ্রী এবং শিলালিপি মিলে প্রায় ১৯ হাজারের মতো প্রত্ননিদর্শন আছে। যদিও জায়গার অভাবে প্রদর্শিত রয়েছে ১১শ’ থেকে ১২শ’ নিদর্শন। অচিরেই সম্পূর্ণ প্রত্ননিদর্শন উন্মুক্ত করার কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে জাদুঘরটি।

এ বিষয়ে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা। । অনেক বিদেশি গবেষক শুধু এই নিদর্শন দেখতেই রাজশাহীতে আসেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রতিদিনই এখানে আসেন। এই সংগ্রহশালা নিয়ে অনেক সম্ভাবনা বিদ্যমান। আমরা এটিকে নিয়ে পরিকল্পনা করছি। সম্প্রতি জাদুঘরের কিছু উন্নয়ন কাজও হয়েছে। এ অঞ্চলের পর্যটনে এই জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ। 

পুরাকীর্তি: পুরাকীর্তিতেও সমৃদ্ধ মহানগরীসহ এই জেলা, যা পরিদর্শনসহ গবেষণায় দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও আসছেন। মহানগরীর বোয়ালিয়ায় রয়েছে বড়কুঠি, পবায় বাঘবানী ঐতিহাসিক জামে মসজিদ, পুঠিয়ার রাজবাড়ি ও তৎসংলগ্ন আহ্নিক মন্দির, বড় গোপাল মন্দির, জগধাত্রী মন্দির, দোল মন্দির, বড় শিব মন্দির, রথ মন্দির, ছোট আহ্নিক মন্দির, গোপাল মন্দির, ছোট গোবিন্দ মন্দির, বড় আহ্নিক মন্দির, সালামের মঠ, খিতিশ চন্দ্রের মঠ, কেষ্ট ক্ষেপার মঠ, হাওয়া খানা, দুর্গাপুর উপজেলায় কিসমত মারিয়া মসজিদ এবং বিবির ঘর, বাঘা উপজেলার বাঘা মসজিদ, গোদাগাড়ীর কুমারপুর ঢিবি মাজার, উপর বাড়ি মাউন্ড এবং মকরমা মাউন্ড, দেওপাড়া দিঘি ও দরগাহ, আলী কুলি বেগের মাজার, তানোরের ধানোরা ঢিবি ও বিহারাইল ডিবি, বাগমারার বীরকুৎসা জমিদার বাড়ি ও গোয়ালকান্দি জমিদার বাড়ি। সংশ্লিষ্ট দফতর ও স্থানীয় প্রশাসন এই পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। যা এ অঞ্চলের পর্যটনকে সমৃদ্ধ করছে।

সৌন্দর্য: রাজশাহী মহানগরীর সৌন্দর্যের খ্যাতি এখন আর দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নানা রূপ ও গুণের সঙ্গে নানা নামে খ্যাতি পাচ্ছে নির্মল বায়ুর এই শহর। প্রমত্তা পদ্মার তীর-ঘেঁষা এই মেট্রোপলিটন সিটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পরিবেশ ও পর্যটনবান্ধব নানা উদ্যোগে বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। প্রাচীন এ জনপদে সবুজ ও নির্মল বায়ুর সঙ্গে নীরবে নিভৃতে কোনো ঝামেলা ছাড়াই একান্ত স্বস্তির কিছু সময়ও কাটানো যায়।

মহানগরীর প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মার পাড়-ঘেঁষে সৌন্দর্যের এক মহাপ্রাচুর্য রয়েছে। নদীর পাশাপাশি পদ্মার চরের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন অসংখ্য দর্শনার্থী। সৌন্দর্যের কারণে জায়গাটিকে অনেকেই তুলনা করে থাকেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। রাসিক পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্যকে আরও উপভোগ্য করতে নানা উদ্যোগ যেমন বাস্তবায়ন করেছে, তেমনি চলমান রয়েছে উন্নয়ন কাজও।

ঋতুভেদে এই পদ্মাপাড়সহ মহানগরী ও জেলার মেঠো পথের সৌন্দর্যে আসে পরিবর্তন। পড়ন্ত বিকেলে পদ্মাপাড়ের উন্মুক্ত পরিবেশে নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। পদ্মায় পানি থাকুক আর নাই থাকুক নির্মল বাতাস আর বাঁধভাঙা আনন্দে বিচ্ছিন্ন ও ভারাক্রান্ত মনকে নিমিষেই শান্ত করতে পারে। নদীর পাড়জুড়ে জেগে থাকা ছোট-বড় বালুচরে রয়েছে ক্ষুদ্র বনভূমি। যেখানে ভিন্ন রকম ভ্রমণ আনন্দও বিদ্যমান।

পদ্মার পাড় ঘেষে পদ্মা গার্ডেন, লালনশাহ মুক্ত মঞ্চ, আই-বাঁধ, টি-বাঁধ, শিমলা পার্ক, সীমান্তে নোঙ্গর পদ্মাপাড়ের সবচেয়ে সুন্দরতম স্পট। নতুন করে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সংলগ্ন বুলনপুর আই-বাঁধের সৌন্দর্য। আর এসব স্পটে দর্শনার্থীদের ভ্রমণ স্বাচ্ছন্দ্য করতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নৌ-পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট কাজ করছে। শুধু পদ্মাপাড় নয়; মহানগরীর সড়ক ও জেলার প্রান্তিক সড়কের যাত্রাও বেশ উপভোগ্য।

বিশেষ করে রাতের আলোকসজ্জিত নগর দেখে পুরো রাস্তাকেই পর্যটন স্পট মনে হবে দর্শনার্থীদের। মহানগরীর ভদ্রা পারিজাত লেক, সপুরা মঠপুকুরসহ মহানগরীর প্রতিটি মোড় ভিন্ন ভিন্ন রূপের আধার রয়েছে। এছাড়া মহানগরীর শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন, নভোথিয়েটার ও বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ককে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। 

ঐতিহ্য: রাজশাহীর খাবার থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য চর্চাসহ রয়েছে নিজস্ব কালচার। রাজশাহী ঘুরতে এসে কলাই রুটির স্বাদ যেমন ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে, তেমনি রাজশাহীর আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও উপভোগ করেন পর্যটকরা। রাজশাহীর মানুষের সহজ-সরল অতিথি পরায়ণ জীবন পর্যটকরা যেমন উপভোগ করেন, তেমনি ভিন্ন অভিজ্ঞতায় ভ্রমণপিপাসু বাউন্ডুলে মনে এঁকে যান নান্দনিক মায়াবী রূপের উপাখ্যান।

আরএইচএফ/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,