নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ মোগরাপাড়া-বৈদ্যেরবাজার সড়কে চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে যান চলাচলরত মানুষ। যেন দেখার কেউ নেই। এ সড়কে ৫ শতাধিক খানা খন্দ হয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ফলে যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কটি। এ নিয়ে বিগত দুই সাংসদ সোনারগাঁওয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন করলেও এ সড়কে আদৌ তেমন উন্নয়ন হয়নি। তবে জোড়া তালি দিয়ে মাঝে মাঝে কিছু সংস্কার হলেও পরবর্তীতে বৃষ্টির পানি জমে সড়ক নষ্ট হয়ে যায়। এ বেহাল দশা থেকে মুক্তি পেলে চায় এলাকাবাসী।
এ সড়কে বিভিন্ন কোম্পানির ভারি যানবাহন চলাচল, সংস্কার না করা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে উপজেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক মোগরাপাড়া-বৈদ্যেরবাজার সড়কের বাড়ি মজলিশ, দৈলেরবাগ, উদ্ভবগঞ্জ ও বৈদ্যেরবাজার এলাকায় এখন ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজের) নির্মিত এ রাস্তার ইট, বালু, পাথর ও মাটি সরে গিয়ে সৃষ্টি হওয়া গর্তে পড়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যানবাহন দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। গত এক মাসে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে বিভিন্ন যানবাহন উল্টে প্রায় শতাধিক যাত্রী ও চালক আহত হয়েছেন।
এলাকাবাসী সড়কটির দ্রুত সংস্কারের দাবী জানিয়ে প্রশাসনের উধ্বর্তন মহলে আবেদন করেও কোন ফল না পাওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচিত সরকার এ সড়কটি সংস্কার না করলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন সড়কটি সংস্কার করে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজের) নির্মিত সোনারগাঁও উপজেলা সদরে প্রধান সড়ক ও সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক মোগরাপাড়া-বৈদ্যেরবাজার সড়ক। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন তিন উপজেলা মেঘনা, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁওয়ের লাখ লাখ লোক যানবাহন নিয়ে চলাচল করে। এছাড়াও সোনারগাঁওয়ে বেড়াতে আসা হাজারো পর্যটক ও উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও থানা, উপ-কর কমিশনারের কার্যালয়, ভূমি অফিস, সাব রেজিষ্ট্রি অফিসসহ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত লোকজনও এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করেন। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে ৫মিনিট যান চলাচল বন্ধ থাকলে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সড়কে কয়েকটি কোম্পানির ভারী যানবাহন চলাচল ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় হাবিবপুর, বাড়ি মজলিস, শহীদ মজনু পার্ক, দৈলেরবাগ চিড়ার মিল, হাতকোপা, উদ্ধবগঞ্জের সাহাপুরে সাবেক মায়া মহল সিনেমা হলের সামনে ও বৈদ্যেরবাজার এলাকায় ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে বৈদ্যেরবাজার মেঘনা নদীর ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক ছোট বড় গর্ত রয়েছে। এ গর্তে পড়ে অনেক অটো রিকসা দূর্ঘটনার শিকার হয়। আহত হয় অটোর যাত্রী ও চালক। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবী জানিয়ে প্রশাসনের উধ্বর্তন মহলে আবেদন করেও কোন ফল না পাওয়ায় চরম ক্ষোভ ও হতাশা হয়েছেন স্থানীয়রা।
মোগরাপাড়া চৌরাস্তার হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারে প্রশাসন কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে লাখ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ সড়কটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন। বিগত সরকারের এ সড়ক নিয়ে মাথা ব্যাথা ছিল না। বর্তমান সরকার যেন এ সড়কটি উন্নয়ন করে দূর্ভোগ লাঘব করে।
হাতকোপা এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী গাজী জুয়েল জানান, সড়ক সংস্কার না হওয়ায় গর্ত দিয়ে যানবাজনগুলো ধীর গতিতে চলাচল করায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা যাত্রীদের বসে থাকতে হয়। সাবেক সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার উদ্যোগে একাধিক বার সংস্কার হলেও পূর্ন নির্মাণ হয়নি।
অটোচালক রাজিব হোসেন ও সিদ্দিক জানান, দীর্ঘদিন দিন ধরে উদ্ধবগঞ্জের এ রাস্তাটি এতই খারাপ অবস্থা যেন দেখার কেউ নাই। আমাদের অটো চালাতে অনেক কষ্ট হয়। রাস্তার বড় গর্তে পড়ে অটোর মেশিনারী নষ্ট হয়। অনেক সময় যাত্রী নিয়ে অটো উল্টে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে গত এক মাসে প্রায় শতাধিক যাত্রী ও চালক আহত হয়। এ থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।
সোনারগাঁও উপজেলা প্রকৌশলী মো.রেজাউল হক জানান, সড়কটি সওজের অধীনে থাকায় সংস্কারের বিষয়ে এলজিইডির পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জানান, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা-বৈদ্যেরবাজার সড়কটি ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ পুন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) পক্ষ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, এ সড়কটি দ্রুত সংস্কারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
এইচএমআর/এসআর