গত দুই দিনের টানা বর্ষণে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর কয়েকটি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এগুলো ভেঙে বন্যা হওয়ার অশঙ্কা রয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে ধলাই রেল সেতু এলাকায় পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড কমলগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিব আহমেদ।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন জানান, ধলাই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে, উজানে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সোমবার রাত থেকেই নদীর পানি বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে লাঘাটাছড়াসহ সবগুলো পাহাড়ি ছড়ার পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারতের ত্রিপুরার বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ত্রিপুরা ও আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি আবার সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও খুয়াই নদী দিয়ে প্রবাহিত হবে। ফলে ধলাই নদীতে পানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়ন থেকে রহিমপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত ধলাই নদীর ৫৫ কি. মি. এলাকার মাঝে বেশ কিছু স্থানের প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। নদীতে আরও পানি বৃদ্ধি পেলে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষি জমি। বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রধান প্রধান সড়ক বর্তমানে পানির নিচে। বিশেষ করে পৌর এলাকার খুশালপুর, পতনউষার, মুন্সিবাজার, আদমপুর, ইসলামপুর ও আলীনগর এলাকার বৃষ্টির পানি লাঘাটা ও খিন্নি ছড়ায় পানি উপচে পড়ে ফসলী জমি তলিয়ে গেছে।
উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কামরুল মাহমুদ বলেন, রাত থেকে আমাদের পুরো এলাকার মানুষ পানিবন্দি। গরু, ছাগল, হাস, মুরগি ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের প্রয়োজন আমাদের। খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি।'
কমলগঞ্জ উপজেলার কামদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশীদ ও আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুল শমশেরনগরের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান রঞ্জু বলেন, স্কুলে সকাল থেকে পানি ঢুকছে। স্কুলের আঙ্গিনায় ও ক্লাস রুমে পানি ঢোকার ফলে স্কুল ছুটি দিতে হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিব আহমেদ বলেন, ধলাই নদীর পানি মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ভানুগাছ রেলওয়ে সেতু এলাকায় বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ও বেলা ১২টায় ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।
ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ধলাই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকা ও নিম্নাঞ্চলসমূহ পরিদর্শন করেছি। সেসব এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ভাঙনের সম্ভবনা রয়েছে। কৃষি জমিসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেসব এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করা হবে।
-এসএস/এমএ