কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বাড়ছে বন্যার আকার। তলিয়ে গেছে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডের বিস্তৃর্ণ এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অর্ধলক্ষ মানুষ।
এদিকে, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা গেছে দুই বোনসহ তিন জন।
শনিবার কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, প্রমত্তা দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সে. মি. ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৬৮ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে অব্যাহত ভাবে বাড়ছে এ দুই নদের পানি। ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে ছবির মত ভাসছে বামনডাঙ্গা, বেরুবাড়ী, কালীগঞ্জ, ভিতরবন্দ, নুনখাওয়া, কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাষ, নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ ও রায়গঞ্জের কিছু অংশসহ পৌরসভার ৩, ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের ঘর-বাড়ী। ঘরে-বাইরে অথৈ পানিতে রান্না, নাওয়া-খাওয়া নিয়ে অতিকষ্টে তারা।
চৌকির উপর চৌকি বসিয়ে চলছে কোনমতে এক বেলা রান্নার কাজ। দিনের বাকি সময় শুকনো খাবারেই ভরসা তাদের। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সে মজুদও ফুরিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। টিউবওয়েলগুলো তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পয়ঃনিষ্কাষণ সমস্যা প্রকট। বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে। তলিয়ে গেছে প্রায় সকল রাস্তাঘাট। অবরুদ্ধ এসব এলাকার মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বামনডাঙ্গার সেনপাড়া ও পৌরসভার পুর্বসাঞ্জুয়ারভিটা গ্রাম থেকে শহরে আসার সেনপাড়া-সাঞ্জুয়ারভিটা, সেনপাড়া-বোয়ালেরডারা ও সেনপাড়া-অন্তাইপাড় এ সড়ক তিনটির উপর দিয়ে কোথাও কোমড়, কোথাও হাঁটু সমান বন্যার পানি তীব্র স্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে। পারাপারে কলা গাছের ভেলা তাদের ভরসা। এতে কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে মাঝে-মধ্যে।
শুক্রবার ভেলা দিয়ে পারাপারের সময় ডুবে যাওয়া সেচ পাম্পের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা গেছে দুই শিশু। তারা হলো- কালীগঞ্জ বেগুনীপাড়ার শাহাদৎ হোসেনের দুই মেয়ে সুমাইয়া (১১) ও মাছুমা (৬)। একই দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে নারায়ণপুর ইউনিয়নের আব্দুর রহমানের ছেলে সিরাজুল ইসলাম।
মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন জানান, যেহেতু পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে, সেহেতু এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।ভেসে গেছে ২৬৫টি পুকুরের প্রায় ২৪ লক্ষ টাকার মাছ।
উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, নিমজ্জিত হয়েছে ৫০ হেক্টর জমির বীজতলা, আউশ ৬৫ হেক্টর, ২৪ হেক্টর শাক-সবজি, মরিচ আড়াই হেক্টর ও ৮৪ হেক্টর জমির পাটক্ষেত। পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।
উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, পানি ঢুকে পড়ায় পাঠ দান ও পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা মিলে ২৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও ৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সেখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীর অনেকেই বন্যার্ত এলাকায় অবরুদ্ধ। তাদেরকেও কর্মক্ষেত্রে যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, পানি যেভাবে বাড়ছে আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার কবলে পড়তে পারে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যার অবনতি হওয়ায় এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তাদের মাঝে সরকারি ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ৪৫ মে. টন জিআর চাল ও ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার শুকনো খাবারের ৬৫০ প্যাকেজ। প্রতি প্যাকেজে দেয়া হয়েছে চাল, ডাল, চিনি, লবন, তেল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আরো চাহিদা পাঠানো হয়েছে। পেলে তা বিতরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ জানান, আমরা সর্বদা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো।
-কেএস/এমএ