For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

সেতু ভেঙে ৯ জন নিহতের ঘটনায় ঠিকাদারের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ

Published : Saturday, 22 June, 2024 at 7:43 PM Count : 205

বরগুনাআমতলী উপজেলা চাওড়া খালের উপর নির্মিত হলদিয়া হাট ব্রিজ ভেঙ্গে কনেপক্ষের নয় যাত্রী নিহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে এক পরিবারের তিন জন। অপর নিহতরা সকলেই পরস্পর আত্মীয়-স্বজন।

অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। ফলে নির্মাণের ৫ বছরের মাথায় ব্রিজের মাঝখানের ভীম ভেঙ্গে যায়। গত ১০ বছর ধরে এ ভাঙ্গা নরবড়ে ব্রিজের উপর দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত অর্ধ লক্ষ মানুষ চলাচল করতো। ব্রিজ নির্মাণকারী ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার শাস্তি দাবীতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাওড়া খালের উপর হলদিয়া হাট এলাকায় আয়রণ ব্রিজ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে। ওই ব্রিজের নির্মাণ কাজ পায় তৎকালিন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ব্রিজ নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা ব্রিজ নির্মাণ করেছে। নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় ব্রিজের মাঝের ভীম ভেঙ্গে যায়।

গত ১০ বছর ধরে ওই ভাঙ্গা ব্রিজ দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত অর্ধ লক্ষ মানুষ চলাচল করে আসছে। শনিবার কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমির সহকারী শিক্ষক উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমতলী পৌর শহরের খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে ডা. সোহাগের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার ওই কনেকে বরের বাড়ি তুলে আনেন। শনিবার মেয়ের পক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে মাইক্রো এবং অটো গাড়িতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে হলদিয়া ব্রিজ পার হওয়ার সময় ব্রিজের মাঝের অংশ ভেঙ্গে যায়। এতে মাইক্রোবাস ও অটো গাড়ি খালে পড়ে যায়। 
অটোতে থাকা যাত্রীরা সকলে সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা খালে তলিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা ওই মাইক্রোতে থাকা লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী নাশির উদ্দিন।

খবর পেয়ে আমতলী ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে মাইক্রোবাসে থাকা কনে পক্ষের নয় যাত্রী নিহত হন। নিহতরা হলেন- মাদারীপুরের শিবচরের মুনী বেগম (৪০), বড় মেয়ে তাসফিয়া (১১), ছোট মেয়ে তাহিয়া (৭), একই এলাকার ফরিদা বেগম (৫৫), রাইতি (৩০), ফাতেমা আক্তার (৪০), রুবী বেগম (৪০), হলদিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের মেয়ে হৃদি (৫) ও তার মা জাকিয়া বেগম (৩০)। তাদের মধ্যে রুকাইয়াত ইসলাম ও জাকিয়ার বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে। অপর নিহত সাত জনের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কোকরার চর গ্রামের বাসিন্দা। তারা কনে হুমায়রার মামা বাড়ির আত্মীয়-স্বজন।

খবর পেয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা প্রশাসক মোহ. রফিকুল ইসলাম,  উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম সরোয়ার ফোরকান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

মাইক্রোবাসে থাকা সোহেল মিয়া বলেন, মাইক্রোবাসে কনেপক্ষের ১৬ জন যাত্রী বরের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে হলদিয়া হাট ব্রিজে উঠামাত্রই মাঝখানে ভেঙ্গে মাইক্রোবাসটি খালে পড়ে যায়। আমিসহ তিন জন সাতরে কিনারে উঠতে পেরেছি। পরে স্থানীয়, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ নয় জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, মাইক্রোবাস ও অটো গাড়িটি ব্রিজের মাঝে আসামাত্রই ধপাস করে ব্রিজ ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক আমরা স্থানীয়দের নিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চালাই। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।

একই পরিবারের তিন নিহতের স্বজন আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার কিছুই রইলো না। আমার দুই কন্যা ও স্ত্রী মারা গেছে। সব হারিয়ে আমি এখন অসহায়। 

হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, ব্রিজ নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা নির্মাণ করেছে। ফলে নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই ব্রিজের মাঝের ভীম ভেঙ্গে গেছে। ওই ভাঙ্গা ব্রিজ দিয়ে অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ চলাচল করতো। 

তিনি বলেন, এই ভাঙ্গা ব্রিজ মেরামতের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বহুবার জানিয়েছি কিন্তু তিনি আমলে নেননি। যার ফলে আজ নয় জনের প্রাণ গেল। ঠিকাদার দায়সারা ব্রিজ নির্মাণ করায় এবং উপজেলা প্রকৌশলী ব্রিজ সংস্কার না করায় তাদের শাস্তি দাবি করছি।

আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ব্রিজ ভেঙ্গে মাইক্রোবাস খালে ডুবে নিয়ে কনেপক্ষের নয় জন মারা গেছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। 

ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, আমি যথাযথ ভাবেই ব্রিজ নির্মাণ করেছি। ব্রিজ নির্মাণ কাজে কোনো অনিয়ম করিনি। 

আমতলী ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার ইনচার্জ মো. হানিফ বলেন, চার ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে মাইক্রোবাস উদ্ধার করতে পারিনি। উদ্ধার চেষ্টা অব্যাহত আছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ব্রিজ ভেঙ্গে নিহত নয় জনই হাসপাতালে আনার পূর্বেই মারা গেছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমতলীতে আমার যোগদানের পূর্বে এ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উদ্ধার কাজের তদারকি করছি। 

জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্রিজ নির্মাণে যে ঠিকাদার অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, নিহতের স্বজনদের হাসপাতালে সমবেদনা জানিয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থলে বিক্ষুদ্ধ মানুষকে শান্ত করেছি। ব্রিজ নির্মাণে অনিয়মের কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহতের পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করা হবে। 

-এসকে/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,