For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

মেহেদী রাঙা হাত বাড়িতে এসেছে সাদা কাফনে মুড়িয়ে

Published : Sunday, 12 May, 2024 at 6:30 PM Count : 301



‘রঙিন শাড়ি পড়ে, মেহেদি রাঙা হাতে শ্বশুড়বাড়িতে যাওয়া নববধূ ফারিয়া হাসান ইতি (২৫) শনিবার বাবার বাড়িতে ফিরে এসেছে সাদা কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে কফিন বন্দি নিথর দেহে। ইতি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. আব্দুর রশিদের কন্যা।

বাবার অভিযোগ, আমার মেয়ে মরতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন, ঘাড়ে ৩টি ইনজেকশনের দাগ, হাতে ব্লেড দিয়ে কাটা ক্ষত চিহ্ন রয়েছে, বাম হাত ভাঙা, কানের একাংশে কালো দাগ রয়েছে। তাকে নির্মমভাবে আঘাতের পর হয়তো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে বা হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে নার্সিং সেবাকে বেঁছে নিয়েছিল। সকল বাধা অতিক্রমের মন মানসিকতা ছিল তাঁর। যে কারণে সে কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাভার মডেল থানার ওসি শাহ জামান। তিনি জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহতের স্বামী মো. শাকিরুল হক শুভকে (৩০) আটক করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। 

শুভর বাবা ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বালুয়াপাড়ার গোলাম মোহাম্মদ খান পাঠান (ডা. রায়হান) জানান, আমি প্রথম শুনেছি আমার পুত্রবধ‚ ইতি অসুস্থ। পরে জানলাম সে আত্মহত্যা করেছে। ঘরের দরজা ভেঙে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে। ঘরে ভাত-মাছ-মাংস রান্না করা ছিল, কেউ কিছু খায়নি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্ভবত বিরোধ চলছিল। 

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর শুভর সঙ্গে ইতির বিয়ে হয়। ইতি গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি ও ২০১৮ সালে রাজবাড়ি নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করে। বর্তমান সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ের পর থেকে সাভারের তালতলা বেকারি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ইতি টানা ৩দিনের উিউটি শেষ করে বাসায় ফেরেন। সকাল ১০টার দিকে ইতি তার মা পারভীন আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি তার মাকে জানান, ”আমি কী এখানে থেকে মরব; না চলে আসব?” তখন তার মা ইতিকে জানান, তোদের কী হয়েছে? তখন কোনো কিছুই বলে নাই। এরপর ওর বোনকে ফোন দিয়ে কারণ জানতে চায়, তখনো কিছু বলে নাই। এরপর হঠাৎ আমার মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই, এই চিৎকারই, শেষ কথা, মেয়ের কণ্ঠের শেষ চিৎকার। এরপর থেকে মেয়ের ফোন বন্ধ, মেয়ের জামাই শুভর ফোনে একাধিক নাম্বার থেকে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ করে নাই।

তিনি আরও জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বেয়াই ডা. রায়হান ফোন দিয়ে বলেছেন, মেয়ের কী অবস্থা একটু খোঁজ নেন, তখন আমরা বলেছি, মেয়ের ফোন বন্ধ, জামাইতো কল রিসিভ করে না। এরপর শুভর নাম্বারে কল দিলে কল রিসিভ করেছে, প্রথমে আমরা কেমন আছি এসব জিজ্ঞাস করে। তারপরে বলে ইতি আর নাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে, আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।

ইতির মৃত্যুতে শোক বইছে এলাকাজুড়ে। ছুটে এসেছে ইতির বান্ধবীরাও। কয়েকদিন আগে বিয়ের মেহেদি রাঙার সেই হাত, বিয়ের শাড়ি আর স্মৃতিময় ঘটনা বলে তারা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। বান্ধবী তাসফিয়া জাহান উর্মি জানায়, ইতি অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের একটা মেয়ে। সেগুলো স্কুলজীবনে আমাদেরকে পরামর্শ দিতো। সে মৃত্যুর পথ বেছে নেবে বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই তো সেদিন রঙিন শাড়ি আর মেহেদি রাঙা হাতে বিদায় জানিয়ে গেলাম। এটাই যে শেষ বিদায়, সে তো বুঝি নাই।

ইতির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার রাতে গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা গ্রামের বাবার বাড়িতে এসে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রাতেই তাঁর লাশ বাবার বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

এসআইএম/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,