সারাদেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর মধ্যেই রোববার খুলেছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথারীতি ক্লাস চলছে। সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে খুলে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় বন্ধ রয়েছে শুধু প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি হবে না। এমনকি শ্রেণিকক্ষের বাইরের কোনো কাজও শিক্ষার্থীদের দিয়ে করানো যাবে না।
তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। কারণ, যে তীব্র গরমের কারণে গত এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, সেই গরম এখনও বিদ্যমান। ফের ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্টও জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে।
তারা বলছেন, সরকার যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেই দিচ্ছে, এখন প্রথম দিনটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুক। কোনো ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে।
এদিকে, সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের আনাগোনা দেখা গেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা গেছে অভিভাবককে। দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় একদিকে যেমন ক্লাসে যাওয়ার তাড়া, তেমনি রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও।
মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছে সাত বছরের মারজিয়া মিম। রামপুরার উলন রোডের একটি কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সে। কতদিন পর স্কুলে যাচ্ছো জিজ্ঞেস করতেই মারজিয়া বলে, অনেক দিন পর। রোজার আগে গিয়েছিলাম। তারপর তো বন্ধ ছিল। আর যাইনি। আজ যাচ্ছি।
মারজিয়ার মা আম্বিয়া খাতুন বলেন, বাসায় যতটুকু সম্ভব পড়িয়েছি। তবুও স্কুলের পড়া আর বাসার পড়া কি এক? সকালে স্কুল। সাড়ে ৯টার মধ্যেই শেষ। সে জন্য নিয়ে যাচ্ছি। বেশি গরম শুরুর আগেই বাসায় চলে আসা যাবে। সমস্যা হবে না।
বাড্ডা আলাতুন্নেছা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, স্কুল খুলছে ভালোই লাগছে। তবে গরমে এত সময় স্কুলে থাকা কষ্ট হবে। ক্লাস কমিয়ে মর্নিং স্কুল করে দিলে ভালো হতো।
স্কুলটির সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল আহাদ বলেন, আমাদের এখানে সব শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত ফ্যান আছে। এখন ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ওত বেশি না যে গাদাগাদি করে বসতে হবে। আশা করি সমস্যা হবে না। তারপরও তো বলা যায় না। আবহাওয়া দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাক, সেই প্রত্যাশা করি।
রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের সামনে দেখা যায়, অভিভাবকরা তাদের সন্তান নিয়ে স্কুলে আসছেন। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৬টার দিকেই চলে এসেছেন অনেকে। আবার স্কুল গেটে পৌঁছে ভেতরে প্রবেশের আগেও গরমে বাইরে খেলাধুলা না করার জন্য সন্তানকে উপদেশ দিয়ে সতর্ক করছেন। সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছেন পানি, জুস। কিছু সময় পরপর পানি পান করতেও বলে দিতে দেখা যায় অনেককে।
বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, তীব্র গরমের মধ্যে স্কুল না খুলে অনলাইন ক্লাসের প্রতি জোর দেওয়া যেত। সকালে রোদ না থাকলেও গরম হওয়ার কারণে এমনিতেই ঘেমে যেতে হচ্ছে। আর কিছু সময় পর যখন রৌদ্র উঠবে তখন অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। আরো দুই থেকে তিন দিন বন্ধ বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বাসায় রাখতে পারলে ভালো হতো বলেও মন্তব্য করেন তারা।
ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ছুটি বাড়ানো হয়। এতে আরও এক সপ্তাহ বন্ধ থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ২৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথারীতি ক্লাস শুরুর কথা বলা হয়। পাশাপাশি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যে শিখন ঘাটতি হয়েছে, তা পূরণে এখন থেকে শনিবারও মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা খোলা থাকবে।
এদিকে, সময়সূচিতে পরিবর্তন এনে ক্লাস শুরু করেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নতুন সূচি অনুযায়ী- এক শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলবে সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। আর দুই শিফটের বিদ্যালয়ে প্রথম শিফট ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট পৌনে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চললেও বন্ধ থাকবে অ্যাসেম্বলি। পাশাপাশি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় আপাতত বন্ধই থাকছে।
-এমএ