সাভারে আগুনের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৪, দায় নিবেনা সওজ
Published : Wednesday, 3 April, 2024 at 7:10 PM Count : 154
সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোরপুল এলাকায় তেল ভর্তি লরি উল্টে পাঁচ গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪ জনে দাড়িয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে মোঃ সাকিব (১৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের ১০০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল।
নিহত সাকিব বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না গ্রামের মোঃ আবেদ আলীর ছেলে। সে তরমুজ ভর্তি ট্রাকের হেলপার (চালকের সহযোগী) ছিল। ট্রাক চালক হেলালের সঙ্গে বরগুনা থেকে তরমুজ নিয়ে গাজিপুরের দিকে যাচ্ছিল তারা।
নিহত সাকিবের বড় ভাই নাইম বলেন, আমাদের বাড়ি বরগুনার গৌরিচন্না বাজারে। আমার বাবা খাগড়াড়িতে অটোরিকশা চালান। আর আমি পাইলিংয়ের কাজ করি। অভাবের সংসার হওয়ায় গত ৪ মাস ধরে ট্রাকের হেলপার হিসাবে কাজ নেয় সাকিব। ট্রাকের চালক হেলাল হাওলাদারের ট্রাকে বরগুনা থেকে তরমুজ লোড দিয়ে গাজিপুর যাচ্ছিল সে। মঙ্গলবার সকালে জানতে পারি সাভারের দুর্ঘটনায় সাকিব দগ্ধ হয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ভাইয়ের সারা শরীর পুড়ে গেছে। অবশেষে গত রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই ট্রাকের চালক হেলাল হাওলাদারেরও মৃত্যু হয়। সে বরগুনা সদর উপজেলার ছোটগরিচন্না গ্রামের জয়নুউদ্দিন হাওলাদার-এর ছেলে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকালে দগ্ধ অবস্থায় ৮ জনকে বার্ন ইউনিটে আনা হয়। তাদের মধ্যে হাসপাতালে আসার আগেই নজরুল ইসলাম নামে একজনের মৃত্যু হয়। বাকি সাতজনের মধ্যে হেলাল ও সাকিবের শরীরের ১০০ শতাংশ পোড়া ছিল। এই দুইজনের মধ্যে ঘটনার দিনই রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ট্রাক চালক হেলাল হাওলাদারের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে রাত ১টা ২০ মিনিটে ট্রাকের হেলপার সাকিবের মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে মিলন মোল্লার শরীরের ৪৫ শতাংশ, শিশু মীমের শরীরের ২০ শতাংশ, আল আমিনের ১০ শতাংশ, নিরঞ্জনের ৮ শতাংশ, আব্দুস সালামের ৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।
স্থানীয় ট্রাক ও বাস চালকদের অভিযোগ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যত্রতত্র সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নির্মান কাজ পরিচালনা করায় প্রায়ই ছোট ছোট দূর্ঘটনায় পড়তে। ইউটার্ন নির্মানের জন্য সড়কের উপর অস্থায়ী পিলার দিয়ে ব্যাড়িকেড দেয়ার কারনে ভোররাতে তেলের লরির চালক সেটি বুঝতে না পেড়ে সেগুলোর উপর দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে দেয়। এসময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সড়ক বিভাজকের সাথে ধাক্ক খেয়ে উল্টে যাওয়ায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় সড়কে আলকতারা মাখানো পাথর দেয়া হয়। গাড়ির চাকার সাথে লেগে পাথরগুলো উঠে যাওয়ায় সেসব পাথরের জন্যও সড়কে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায় মোটরসাইকেল যাত্রীরা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান বলেন, মহাসড়কে ইউটার্ন নির্মানের জন্য অস্থায়ীভাবে সিমেন্টের পিলার দেয়া হয়েছিলো। বিষয়টি সম্পর্কে চালকদের সচেতনতার জন্য লাল কাপড় দিয়ে সতর্কচিহ্নও দেয়া হয়েছিলো কিন্তু কোন একটি গাড়ি সেটি ভেঙ্গে দিয়ে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, দূর্ঘটনা কারওই কাম্য নয়। একটা দূর্ঘনটা ঘটেছে, পত্র-পত্রিকায় লেখা আসছে। এবিষয়ে আমরা কাজ করছি যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের দূর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য আরও বেশী করে সতর্কবার্তার ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে দূর্ঘটনা কবলিত তেলের লরির চালকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে সাভারে হাইওয়ে থানা পুলিশ। তদন্ত সাপেক্ষে এই মামলায় আসামীর সংখ্যা আরও বাড়তে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ বাবুল আক্তার।
প্রসঙ্গতঃ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাভারের জোরপুল এলাকার একটি তেলের লরি উল্টে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় আশেপাশে থাকা চারটি ট্রাক ও একটি প্রাইভেটকার পুড়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলেই ইকবাল হোসেন নামে সিমেন্ট ট্রাকের হেলপার মারা যায়। পরবর্তীতে দগ্ধ ৮ জনকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হলে সেখানে নজরুল ইসলাম নামে আড়তদার ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রাত সাড়ে ৯ টায় হেলাল ও রাত ১টা ২০ মিনিটে সাকিবের মৃত্যু হয়।
ওএফ/এসআর