For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

লেবুর রাজ্যে লেবুর দাম বেড়ে ৪গুণ

Published : Wednesday, 13 March, 2024 at 7:16 PM Count : 232



দেশে সবচেয়ে বেশি লেবু উৎপাদন হয় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। শ্রীমঙ্গলে রয়েছে শতাধিক লেবুর আড়ত। এলাকায় প্রতি দিন লাখ লাখ টাকার লেবু পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। রমজানে বাজারে লেবুর চাহিদা বেশি থাকায় ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে লেবুর দাম আকাশছোঁয়া। হালি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে হালি ৪০-৬০ টাকা থাকলেও খুচরা বাজারে তা ১০০-১২০ টাকা ছুঁয়েছে। বাজারে পর্যপ্ত লেবু থাকার পর ও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের কাঁচাবাজারের কয়েকটি আড়তের দোকান ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়। আড়তদাররা বলেন, গত ৯ মাস লেবুর তেমন চাহিদা ছিল না। কৃষকদের খেতের মধ্যেই লেবু পড়ে ছিল। শ্রমিকদের টাকা দেওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হয়েছে। ১-২ মাস লেবুর চাহিদা থাকে তখন দামও একটু থাকে। তাছাড়া রমজান মাস থাকার কারণে লেবুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে। অথচ এ লেবুর হালি কিছুদিন আগেও বিক্রি হয় ১০-১৫ টাকায় হালি প্রতি।
সরেজমিন কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজার, আদমপুর বাজার ও শমসেরনগর বাজার ও শ্রীমঙ্গলের পুরান ও নতুন বাজারে দেখা যায়, প্রতিটি লেবু পিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। হালি বিক্রি হচ্ছে ঠিক ১১০-১২০ টাকায়। তবে ছোট লেবুর দাম কিছুটা কম।

বাজারে লেবু কিনতে আশা ডলি বেগম। তিনি জানান, ‘আমার পরিবারের সবসময় লেবুর দরকার হয়। তাছাড়া রমজান মাস। ইফতারের সময় লেবুর শরবত করে আমরা সবাই খাই। এখন ভানুগাছ বাজারে আসলাম লেবু নেওয়ার জন্য। কিন্তু যে লেবু নিয়েছিলাম দুই দিন আগে ১৫-২০ টাকা করে হালি। এখন সেই লেবু কিনতে বাজারে এসে দেখি ১০০ টাকা। অবাক লাগে কী করে এমন দাম হঠাৎ করে বাড়ল। কিন্তু আমার লেবুর প্রয়োজন থাকায় লেবু এত দামে নিতে বাধ্য হচ্ছি।’

শ্রীমঙ্গলের মা বাণিজ্যালয়ের আড়তদার রাজিব আহমদ জানান, ‘লেবু তিন ধরনের রয়েছে। বড়, ছোট ও মাঝারি। আমরা প্রতিটা পিচ লেবু ৮ টাকা থেকে ১৫ টাকা করে পাইকারী বিক্রি করছি। কিছুদিন ধরেই লেবুর বাজার চড়া। যার কারন হলো, ৯ মাস লেবুর চাহিদা থাকে না। এই ২-১ মাস লেবুর চাহিদা থাকে। যার কারণে লেবুর এই দাম। এবার লেবুর ফলন ভালো হলেও সঠিক সময়ে কৃষক লাভ করতে পারেনি। ৯ মাস লেবুর চাহিদা থাকেনা। ফলে কৃষকরা ক্ষতির মধ্যে থাকে। এখন সরবরাহও কম। তাই দাম চড়া। এখানে বিক্রেতাদের কিছু করার নেই। চাহিদা আর সরবরাহের কথা বিবেচনায় দামের এই চড়া ভাব আরো বেশ কিছুদিন থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার লেবু দাম দিয়ে রাখি। কিছু টাকা হাতে রেখে বিক্রি করে ফেলি। কিন্তু প্রশাসন আমাদের মাঝে মাঝে এসে জড়িমানা করেন। এতে যেমন আমাদের ক্ষতি হয় তেমন ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতেও মন চায়।’

ভানুগাছ বাজারের লেবু বিক্রেতা আলীম মিয়া বলেন, ‘আমরা পাইকারি বাজার থেকে হালি ৮০-১২০ টাকায় কিনে আনি। অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে তাই ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রিও কমেছে সমান হারে। এদিকে রমজানের জন্য লেবুর শরবতে উপকারিতা থাকায় লেবুর চাহিদা প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাজারে লেবুর দাম বেড়েছে।’

শ্রীমঙ্গলের প্রবীন লেবু চাষী ছামছুল হক বলেন, ‘আমি ২০-২৫ বছর ধরে লেবুর চাষ করি। এবছর লেবুর চাষ করেছি ১৫ একর জমিতে। যার জন্য প্রায় খরচ হয়েছে ১০ লক্ষ টাকার মতো। এই পর্যন্ত বাজারে বিক্রি করেছি ৩-৪ লক্ষ টাকার মতো। জমিতে কিছু লেবু আছে। যা বিক্রি করলেও আমার মূল টাকা বেরিয়ে আসবে না। ১০ মাস লেবুর দাম পাইনি। বাজার নিয়ে আসলেও কেউ জিজ্ঞাসটাকুও করেনা। লেবু বিক্রি করে আমার লাভ হয়নি বরং ক্ষতি হয়েছে। এখন লেবুর শেষ সময়। আর এই মাসটাই আমাদের একটু লাভ হয়। এই লেবু চাষ করতে গিয়ে আমাদের অনেকে কষ্ট করতে হয়। কেউ সেটা বুঝবে না। আমরা বাজারে টেলা গাড়ি ও জিপ গাড়ি হিসেবে বিক্রি করি। প্রতিটা টেলা গাড়ি বিক্রি করছি এখন ৬ হাজার ৪শত টাকা (৮শত লেবু) ও জিপ গাড়ি বিক্রি করছি ১৪ হাজার ৬শত টাকা (২হাজার লেবু)। সবদিন আবার এক যায়না।’ তবে গত ৪মাস আগে প্রতিটা টেলা গাড়ি বিক্রি করেছিলা ৪শত টাকা মাত্র (৮শত লেবু) ও জিপ গাড়ি বিক্রি করছি ১হাজার ২শত টাকা (২ হাজার লেবু)।

কিছুদিন আগেও আমি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবাইকে বলেছি ফ্রী লেবু দিব। তখন চাহিদা ছিল না। বাগানেই লেবু পচে থাকতো। আসলে শুধু লাভটা সবাই দেখে, ক্ষতি কেউ খুজে না। এখন ৩-৪টা গাছ খুঁজে ১টা লেবু পাওয়া যায়। প্রতিটা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসতে হয় গাড়ি করে নিয়ে আসতে হয়। তা পাইকারী বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকা বের হয়। সেটা খরচও হয়না। হয়তো কিছুদিন পর লেবু চাষ করা ছেড়ে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি লেবুর পাশাপাশি নাগা মরিচের চাষ করি। যা লেবু গাছের সাথী ফসল। সেগুলো আবার লটারীর মতো। লাগলে লাগছে না লাগলে নাই। তবে এবছর আমার নাগা মরিচ ভালো হয়েছে। যার কারণে লেবুতে ক্ষতি হলেও মরিচে পুসিয়ে নিতে পারবো। তবে তুলনায় লাগ কম হবে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে এ বছর ৮০০ ও কমলগঞ্জে চাষ হয়েছে ১৪০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। এত লেবু চাষ হওয়ার পর কেন এত দাম কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারা বছর লেবুর চাষ হয়। কিন্তু কৃষকরা তো সারা বছর লাভ করতে পারেনা। প্রায় ১০ মাস তারা খরচটা বের করে আনা দায় হয়ে পড়ে। এই দুই মাস লেবুর একটু চাহিদা। তাই এই সময়টাতে তারা কিছুটা লাভ করে।

তিনি আরও বলেন, এখানে তো প্রক্রিয়াজাত করে রাখার ব্যবস্থা নাই যদি সেই ব্যবস্থা থাকতো তাহলে দাম থাকতো না। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা অবগত করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে প্রক্রিয়াজাত করনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,