মেহেরপুরে এবার আমের ফলন বিপর্যয় হতে পারে বলে ধরেই নেয়া যায়। ভরা মৌসুমেও আম বাগানে দেখা নেই মুকুলের। যতসামান্য হাতে গোনা কিছু গাছে মুকুল দেখা গেলেও সেগুলো বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে ফলন বিপর্যয়। ফলে চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত মুকুল না আসায় চিন্তাগ্রস্ত আম চাষিরা।
জলবায়ু পরিবর্তন, দেরিতে শীতের আগমন, দীর্ঘমেয়াদী শৈত্যপ্রবাহ, অতিরিক্ত শীত ও অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় আমের গাছে মুকুল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এছাড়াও সঠিক নিয়মে ও উপযুক্ত সেচ ও স্প্রেসহ অন্যান্য পরিচর্যা ঘাটতির কারণে এনমটি হয়েছে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।
মেহেরপুরের কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, জেলায় তিন হাজার ৩৩৬ হেক্টর আম বাগান রয়েছে। গেল বছর বাগান থেকে ৪১ হাজার ৩০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলারও চাহিদা পূরণ করেছে। একইসঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও মেহেরপুরের আম রপ্তানি করে যথেষ্ট মুনাফা অর্জন করেছেন বাগান মালিকরা।
তবে চলতি মৌসুমে ২০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হতে পারে বলে মনে করছে মেহেরপুর কৃষি বিভাগ। যা গতবারের অর্ধেক।
শুস্বাদু ল্যাংড়া, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলী, আম্রপালী, গোপালভোগ, হাড়িভাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি জাতের আম বাগান রয়েছে জেলায়। আম উৎপাদনে চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরার পরেই রয়েছে মেহেরপুরের স্থান। তবে এবার মুকুল না আসায় জেলার চাহিদা পূরণ করাও সম্ভব হবে না বলে ধারণা করছেন বাগানীরা।
এদিকে, অগ্রিম বাগান কিনে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে বেশ কিছু ব্যবসায়ী।
মেহেরপুরের বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছ জুড়ে নতুন পাতা গজিয়েছে। কিছু কিছু গাছে কয়েকটা ডালে দেখা যাচ্ছে মুকুল। বৃষ্টির কারণে সেগুলোও নষ্ট হতে চলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ গাছে মুকুল নেই। ফেব্রুয়ারি মাসের সপ্তাহখানেক পরেও বাগানের আম গাছে কোনো মুকুল নেই। যে কয়েকটি গাছে মুকুল আছে সেগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন ওষুধ ও কীটনাশক স্প্রে করছেন বাগানীরা।
সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের স্কুল শিক্ষক রিপন আলী জানান, ৮ বিঘা হিমসাগর আমের বাগান রয়েছে। ওষুধ স্প্রে করার জন্যও যদি বলেন তাও একটিও মুকুল পাওয়া যাবে না। পাশেই কিছু চারা গাছ আছে তাতে কিছু মুকুল ধরেছে। বাগানের এমন পরিস্থিতি এর আগে কোনো মৌসুমে হয়নি। এবারই এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে।
উত্তরশালিকা গ্রামের আম বাগান মালিক ইসমাইল হোসেন জানান, তার ৩ বিঘা জমিতে আম বাগান। কিন্তু একটি গাছেও মুকুল আসেনি। মুকুল আসবে এ আশায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে বাগানে স্প্রে করছি।
হেমায়েতপুরের আম ব্যবসায়ী আনারুল জানান, বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০ বিঘা জমির আম বাগান কিনেছি। দুই বছরের জন্য বাগান কিনতে হয়। গেল বছর মুকুল এসেছিল কিন্তু ঝড়ে আম পড়ে যাওয়ায় বেশ লোকসানের মুখে পড়েছিলাম। এ বছর সেই লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার আশা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশা পূরণ হচ্ছেনা।
জেলায় পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করা বেসরকারী সংগঠন সুবাহ সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার রয়েছে বিশাল আম বাগান যা মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের দু'পাশ ঘিরে বিস্তৃত। গত বছরেও দৃষ্টিনন্দন ছিল এই লম্বা বাগান। কিন্তু এ বছরে সেই বাগানে নেই কোনো মৌমাছির আনাগোনা।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জানান, তিনি আম গাছের পরিচর্যার কোনো ত্রুটি রাখেননি। কিন্তু মুকুল আসেনি। আম ফলের অফ ইয়ার অন ইয়ার আছে। সেমতে বলা যায় এ বছর অফ ইয়ার। তবে মুকুল আসার আর কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয়না।
মেহেরপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উদ্ভিদ) বকুল হোসেন জানান, আম বাগানে অফ ইয়ার বলতে কিছু নেই। জলবাযু পরিবর্তনের ফলে এমনটি হচ্ছে। তবে সঠিক যত্ন থাকলে প্রতি বছর কম-বেশি আম ধরবে। আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। মুকুল আসার সম্ভাবনা এখনো আছে।
-এমআর/এমএ