For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাজশাহী-ঈশ্বরদী সড়কের বাঁক যেন মরণফাঁদ, বাড়ছে প্রাণহানির ঝুঁকি

Published : Thursday, 7 March, 2024 at 3:38 PM Count : 147


রাজশাহীর বানেশ্বর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। রাজশাহীর সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যোগাযোগের জন্য সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ পথে রয়েছে ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক।

সড়কের দু’পাশে বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা থাকায় এসব বাঁকে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের অবস্থান বুঝতে পারেন না চালকরা। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় তেমন শৃঙ্খলাও নেই। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, হয়েছে প্রাণহানি। এভাবে সড়কের বাঁকগুলো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গতি কমিয়ে চলায় পণ্যবাহী গাড়িতে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে।

বৃহস্পতিবার চারঘাটের ফকিরের মোড় বাঁকে টমেটো বোঝাই ট্রাক উল্টে যায়। আগের দিন ভোরে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক উল্টে পাশের বাড়িতে ধাক্কা খায়। একই দিন বিকেলে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’জন আহত হন। 
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাঘার বিনোদপুর সাজির বটতলা বাঁকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন জুয়েল রানা (৩০) নামে এক যুবক। বিয়ের আগের দিন চুল কাটিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।


স্থানীয়রা বলছেন, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের দ্রুতগামী যানবাহন এ সড়কে চলাচল করে। সরু সড়কটি হয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়ক। সবার প্রত্যাশা ছিল, মহাসড়ক করার সময় বাঁকগুলো সোজা করা হবে। উল্টো বাঁক আরও বেড়েছে। ট্রাকচালক মহসিন আলীর ভাষ্য, অধিকাংশ পণ্যবাহী ট্রাকে অনেক বেশি লোড থাকে। এ জন্য বাঁকের স্থানে গতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে আনতে হয়। তখন গাড়ির পেছনে মোটরসাইকেলে থাকা ছিনতাইকারীরা রশি কেটে পণ্য নামিয়ে নেয়। এতে মাঝেমধ্যে পণ্যের মালিকদের কাছে জরিমানা গুনতে হচ্ছে।

রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ৫৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ করছে। আগে ১৮ ফুট চওড়া থাকলেও এখন ৩৪ ফুট করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি। সড়কে সওজের যে জমি আছে, তা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করলে সড়কটিই হতো না। এ জন্য বাঁক রেখেই কাজ শেষ করা হয়েছে। সড়কের শুধু চারঘাট ও বাঘার মধ্যে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। নতুন প্রকল্প নিয়ে সড়কটি সোজা করা হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চারঘাটের সরদহ ট্রাফিক মোড়, পাইলট স্কুল, ফকিরের মোড়, সিনেমা হল, কাঁকড়ামারী বাজার মোড়ে বাঁক রয়েছে। বাঘার মীরগঞ্জসহ মনিগ্রাম ইউনিয়নে পাঁচটি, বাজুবাঘার চণ্ডিপুর বাজারের পূর্বে চারটি ও নাটোরের লালপুর সদরে প্রবেশের মুখে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুটি বাঁক। সরু সড়ক চওড়া হওয়ার পর বাঁকগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি চারঘাট-বানেশ্বর অংশের নাওদাড়া বাঁকে ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে কলেজপড়ুয়া দুই বন্ধু অনিক ইসলাম ও মুরাদ আলী প্রাণ হারান।

গত ২৯ মে চারঘাট ফায়ার সার্ভিস মোড়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে আব্বাস আলী নামে একজন নিহত হন। একই স্থানে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়াও প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার খবর দিয়েছেন স্থানীয়রা। আহতদের অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।

চারঘাটের কাঁকড়ামারী বাজার বাঁক এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, আগে সড়কটি দিয়ে দু’চারটি বড় গাড়ি চলত। আঞ্চলিক মহাসড়ক হওয়ার পর হাজার হাজার ভারী যানবাহন চলছে। রাত হলেই আতঙ্কে থাকতে হয়। প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর আসে। বাঘার হরিরামপুর এলাকার সেন্টু আলীর ভাষ্য, সড়ক চওড়া করায় কিছু বাড়ি ঘেঁষে গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে দেয়ালে বৈদ্যুতিক বাল্ব লাগিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে জানালেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে, গত ১১ জানুয়ারি চারঘাটের কাঁকড়ামারী বাজারসংলগ্ন বাঁকে ট্রাকের রশি কেটে ডালের বস্তা নামিয়ে নেন ছিনতাইকারীরা। গত ২৪ আগস্ট মীরগঞ্জ মোড়ে রশি কেটে প্লাস্টিকের পণ্য নামিয়ে নেওয়া হয়। চারঘাট মডেল থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান ছিনতাইয়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বাঁকে দুর্ঘটনার পাশাপাশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এমন চক্রকে আটক করা হয়েছে। আঞ্চলিক মহাসড়ক হওয়ার পর গাড়ি চলাচল কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে এ সড়কে ট্রাফিক বিভাগ নেই। সে জন্য কিছু যানবাহন বেপরোয়া চলাচল করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সড়কের কাজ শুরুর সময় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করার দাবি জানিয়ে আসছেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চারঘাট উপজেলা শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা। তিনি বলেন, সোজা না করে আরও বাঁকা করা হয়েছে সড়ক। এতে দুর্ঘটনা ঘটবে স্বাভাবিক। নতুন প্রকল্প কবে আসবে, তাও বলতে পারছে না দপ্তরগুলো।


সরকারি জমি সব ব্যবহার করেও বাঁকগুলো সোজা করা যায়নি বলে দাবি রাজশাহী সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রেজওয়ানা করিমের। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়ায় চারঘাট ও বাঘা বাজারে দেড় কিলোমিটার কাজ বাকি আছে। সে কাজ শেষ হলে বাঁক সোজা করার জন্য নতুন প্রকল্পের আবেদন করা হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সাইন সিগন্যাল দেওয়াসহ অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,