কাপ্তাই হ্রদের জমিতে চলছে বোরোর আবাদ
Published : Thursday, 22 February, 2024 at 11:30 AM Count : 177
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যায়। এতে কাপ্তাই হ্রদের বেশ কিছু অংশে পানি কমে গিয়ে জেগে উঠে ছোট-বড় চর। মৌসুমি চাষিরা হ্রদের উপর নির্ভরশীল এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে চরগুলোতে চাষাবাদ শুরু করে। এবারও শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে চাষাবাদ শুরু করেছেন চাষিরা।
কাপ্তাই হ্রদের আশপাশে গিয়ে দেখা যায়, বোরো ধানের চাষে ব্যস্ত কৃষক।
রাঙামাটির কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলা সংলগ্ন হ্রদের বেশ কিছু অংশে গিয়ে দেখা যায়, বোরো ধানের সবুজ আবরণে ছেয়ে গেছে কাপ্তাই হ্রদের চারপাশ। এ যেন সবুজের সঙ্গে হ্রদ পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি। চারদিকে বোরো ধানের চারা লাগানোর সমারোহ। কেউ কেউ কাপ্তাই হ্রদে জেগে ওঠা এই ছোট-বড় চরগুলোকে চাষের উপযোগী করে তুলছেন। অন্যদিকে, অনেক চাষি সেই সব চরে বোরো ধানের চারা লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দীর্ঘ ১৫/২০ বছর যাবৎ শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে জেগে উঠা চরে ধানের চাষাবাদ করে আসছে রহমান আলী ও শাহাবুদ্দীন।
তারা জানান, একসময় কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন মাছ ধরা কমে গিয়ে আয় কমে যেত। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন, মাছ ধরার পাশাপাশি বছরের শুষ্ক মৌসুমে যখন কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে আসবে তখন জেগে উঠা চরের জমিতে চাষাবাদ শুরু করবেন। এরপর থেকে গত ১৫ বছর যাবৎ তিনি এই চাষাবাদ করে আসছেন। এতে একদিকে যেমন সফলতা পেয়েছেন সেই সঙ্গে বর্তমানে তার সংসারেও দেখা দিয়েছে আশার আলো।
কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল চাষি মংবাচিং মারমা, সমিরন তঞ্চঙ্গ্যাসহ কয়েকজন চাষি জানান, তারা অনেকেই কাপ্তাই হ্রদে শুষ্ক মৌসুমে জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এতে করে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, চরের এই জমিগুলো পলি ভরাট থাকার ফলে লাঙ্গল ছাড়াই চাষাবাদ করা সম্ভব হয়। তাছাড়া মাটি নরম থাকার ফলে পরিশ্রম যেমন কম হয় তেমনই চাষাবাদে খরচও অনেকটা সাশ্রয়ী হয়।
তারা আরও জানান, এই চাষাবাদে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বেশ ভূমিকা পালন করেন। অবসর সময় তারা এই চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করে আসছেন।
তবে কিছু কিছু চাষি জানান, বর্তমানে কৃষি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে তাদের খরচও অনেক বেড়ে গেছে সেইসাথে নির্ধারিত সময়ের আগে কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়লে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।
তবে কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদে জড়িত এ সকল চাষিদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করে আসছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি চাষিদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়ে থাকেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল চাষিদের যারা জেগে উঠা চরের জমিতে চাষাবাদ করে তাদের আমরা কৃষিবিভাগ থেকে ধানের পাশাপাশি সরিষা, ভুট্টা, সূর্যমুখীর বীজ প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করে আসছি। চাষের বিভিন্ন সার এবং সরঞ্জামও চাষিদের দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বছর বোরো মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে জেগে উঠা চরে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়ে থাকে। প্রতি বছরই এসব জমিতে ভালো ফলন হয়ে থাকে। বিশেষ করে, কাপ্তাই হ্রদের জমিতে চাষ করা কৃষকদের আমরা উচ্চ ফলনশীল এবং উন্নত জাতের চারা প্রদান করি। যাতে তারা দ্রুত সময়ে এর ফলন ফলাতে পারে। পাশাপাশি আমরা কৃষি বিভাগের সকলেই এ সকল কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকি। আশা করছি, প্রতি বছরের মতো এবারও কাপ্তাই হ্রদের জমিতে ফসলের ব্যাপক ফলন হবে।
-কেএইচ/এমএ