সরকারি আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যতামূলক হলেও উপকূলীয় জেলা বরগুনার বেতাগী উপজেলার ১৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০১ টিতে স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার নেই।
ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরেও বেতাগী উপজেলার শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বছর ঘুরে একুশে ফ্রেরুয়ারি এলেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক দিনের জন্য অস্থায়ী ভাবে শহীদ মিনার তৈরি করে বেদিতে ফুল দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২১টি মাধ্যমিক, ৮টি নিম্ন মাধ্যমিক, ২২টি মাদ্রাসা ও ৯টি কলেজ রয়েছে। ৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২২টি মাদ্রাসা মিলিয়ে মোট ১০১টি প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় শহীদ মিনার নেই।
একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নিম্ন মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই। তাই প্রতিবছর একুশে ফ্রেরুয়ারিতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটিতে একদিনের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাঁশ, ককশিট কিংবা কলাগাছসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে। বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ককশিট ও কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। তা ছাড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না বানিয়ে শুধু আলোচনা সভা বা মিলাদ অনুষ্ঠান করে দিবসটি পালন করা হয়।
উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের সোনারবাংলা এলাকায় কতিপয় শিশু-কিশোর একত্রিত হয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কলাগাছ দিয়ে তৈরি করেছে অস্থায়ী শহীদ মিনার।
আয়োজকদের একজন মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে কোন শহীদ মিনার নেই। তাই আমরা কলাগাছ দিয়ে বিকল্প অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়েছি। সেখানেই বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি।’
উপজেলার ৩১ নং হোসনাবাদ সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে আমার বিদ্যালয়ে এখনও শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তাই ককশীট ও কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উপজেলা কমিটির সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই ওই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানে না শহীদ মিনারের তাৎপর্য। আবার যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে, সেগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ধুলা-বালি পড়ে থাকে। একুশে ফ্রেরুয়ারির কয়েক দিন আগে শহীদ মিনার ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়। সারা বছর আবার অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। শহীদ মিনারের প্রতি সবার দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা সবার দায়িত্ব।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ডেকে শিগগিরই শহীদ মিনার তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হবে।
বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন। তবে বরাদ্দ না থাকায় এখনও শতভাগ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক আহমদ বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এবারে আরও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
এইচএইচএম/এসআর