For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

গজারিয়ায় জরাজীর্ণ ঘরে ঝুঁকি নিয়ে ভূমিহীনদের বসবাস

Published : Tuesday, 20 February, 2024 at 7:19 PM Count : 329


মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ষোলআনী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০০টি অসহায়, দুস্থ এবং ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ৬০টি পরিবার নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। 

জানা যায়, উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০টি ব্যারাকে ৯ ফিট দৈর্ঘ্য আর ৬ ফিট প্রস্তের ১০০টি টিনের ঘর রয়েছে। ঘরগুলো বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ৪০টি পরিবার অন্যত্র চলে গিয়েছেন।

প্রকল্পটি পরিদর্শনে দেখা যায়, গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০টি ব্যারাকে ১০০টি টিনের ঘর রয়েছে। ঘর গুলো সংস্কারের অভাবে টিনের চালায় মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। ঘরের মেঝে ও বারান্দার মাটি সরে গেছে। ঘরের বেড়ার টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেলে মরিচা ধরে খসে পড়ছে। ঘরের বেশির ভাগ ঘরের দরজা, জানালা ভাঙাচোরা এবং শৌচাগার বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এসব ঘর গুলোতে বসবাস কারীরা কুয়াশা ও বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে টিনের চালার নিচে পলিথিন টানিয়ে বসবাস করছেন।
গজারিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় আশ্রয়ণ প্রকল্প(ফেইজ-০২) ২০০৯-২০১০ইং অর্থ বছরে ভ’মিহীন পরিবারের জন্য সরকারি অর্থায়নে উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনী গ্রামে মেঘনা নদীর নিকটবর্তী স্থানে ৪ দশমিক ২ একর জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০ টি ব্যারাকে ১০০টি দরিদ্র পরিবার থাকার জন্য ঘর গুলো নির্মাণ করা হয়। 

প্রতিটি কক্ষের এক পাশে রয়েছে রান্না ঘর আরেক পাশে রয়েছে বারান্দা এবং বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের জন্য ১০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে দেয়া হয়। এছাড়া ব্যারাকের ১০০টি পরিবার জন্য ১০টি শৌচাগারও নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী আলী হোসেন (৫০) বলেন, প্রায় ১৪ বছর পূর্বে সরকার যখন এ ব্যারাকগুলো আমাদের মধ্যে হস্তান্তর করে তখন আনন্দের সীমা ছিলো না। ভূমিহীন পরিবারগুলোর কাছে এ ব্যারাকের প্রত্যেকটি ঘর ছিলো স্বপ্নের মতো। 

কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যেতে সময় লাগেনি। হস্তান্তরের কিছু বছরের মধ্যেই ব্যারাকগুলোর টিনের ছাউনিতে মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। বেশির ভাগ ঘর গুলোর দরজা, জানালা ভেঙ্গে গেছে এবং শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যে কারণে যুবতী মেয়ে ও নারীদের নিরাপত্তা না থাকায় এই আশ্রয়ন প্রকল্প ছেড়ে ৪০টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী মো: ছকির প্রধান(৫০) জানান, প্রথম অবস্থায় ঘর গুলো সব ভালোই ছিলো। কয়েক বছর না যেতেই সব মরিচা ধরে নষ্ট হতে শুরু করে। তারপর থেকেই আমাদের আর কেউ কখনো খোঁজখবর নেয়নি। এখানে ১০০ টি পরিবারের জন্য ১০টি নলকূপ দিয়েছিলো। তার মধ্যে সব গুলাই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবার কাছ থেকে ২০ টাকা ৩০ টাকা করে চাঁদা তুলে ২টি টিউবওয়েল ঠিক করে আমরা ব্যবহার করছি। আর ১০টা শৌচাগার থাকলেও একটা শৌচাগারও মহিলা ব্যবহার করতে পারে না। 

তিনি আরও জানান, এখানে ১০০ টি পরিবারের ঘর বরাদ্দ থাকলেও ভাঙ্গাচুরা,জরাজীর্ণ ঘরে থাকা অনুপযোগী হওয়ায় ৪০ টি পরিবার অন্যত্র ভাড়া করা বাসায় চলে গেছেন। আমাদের দাবি সরকার যেন অতি শীঘ্রই এই ঘরগুলা পুনরায় মেরামত করে বসবাস করার উপযুক্ত ব্যবস্থা করে দেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জীবন নেছা (৬০) জানান, তার স্বামী মারা গেছেন বহু বছর আগে। তার ছেলে নাই, মেয়ে ছিলো তাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় স্বামী নিয়ে তারা অন্যত্র ভাড়া থাকেন। তবে কেউ আমার খোঁজখবর নেয় না। নিরুপায় হয়ে এই ভাঙ্গাচুরা ঘরেই থাকি। আর এই আবাসনটি এমন এক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে যে, এখান থেকে কোন কাজ কর্ম করে খাওয়ার ব্যবস্থা নাই। অন্যের বাসায় কাজ করে জীবনটা কোন রকমে কাটায় নিচ্ছি। বৃষ্টি আসলে টিনের চালে পলিথিন, তেরপাল দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করি, কিন্তু কোন রক্ষাই হয় না। বৃষ্টির পানিতে পুরো ঘর ভিজে যায়। তাছাড়া শৌচাগার গুলো এতটাই খারাপ ভিতরে গেলে বাহির থেকে সব দেখা যায়। পুরুষরা কোন মতে ব্যবহার করতে পারলেও মহিলা ব্যবহার করতে পারি না। মাঝে মাঝে বড় বড় অফিসাররা এসে বলে যায়, লোকজন নিয়ে তোমাদের ঘর তোমরা ঠিক করে নাও না হয় ঘর নিবোগা। আমাদের তো সমর্থ নাই যদি থাকতো তাহলে ঘর গুলো ঠিক করে নিতাম। আর আমাদের যদি ৫০-৬০ হাজার টাকা দিয়া ঘর ঠিক করে নিতে হয় তাহলে আমাদের আশ্রয়ণে থাকার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। আমাদের জায়গা জমি নাই, অর্থ নাই বলেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকি। অনেক জায়গায় দেখি প্রধানমন্ত্রী অনেক কিছু দেয় কিন্তু আমাদের তো কিছুই দেয় না।

আশ্রয়ণ প্রকল্পটির বিষয়ে ইমামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুজ্জামান খাঁন জিতু জানান, তিনি সদ্য চেয়ারম্যান হয়েছেন। ইতোমধ্যে আবাসনে বসবাসকারীদের নানাবিধ সমস্যার কথা শুনেছেন। তিনি এই সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কোহিনুর আক্তার জানান, তিনি এই ফেব্রুয়ারি মাসেই যোগদান করেছেন। এই বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তবে আবাসনটির সমস্যার বিষয় গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে সমাধানের ব্যবস্থার করার চেষ্টা করবেন বলে জানান।

এইউ/এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,