শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল কিশোর নাবিদ ইসলাম অনুভব (১৫)। এরপর ১৭ দিন ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে খানিকটা দূরের এক পুকুরে তার ভাসমান মরদেহ পাওয়া গেছে।
নাবিদ দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবার নাম খাদেমুল ইসলাম। নাবিদের মায়ের সঙ্গে বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে।
নাবিদ রাজশাহী মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় মায়ের সঙ্গেই থাকত। নাবিদ এর আগেও একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তার চিকিৎসাও চলছিল। পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ২ ফেব্রুয়ারি নাবিদ বাড়িতে নিজেই লাইটার দিয়ে জ্যাকেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে সে অগ্নিদগ্ধ হয়। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৭ দিন ধরে সে এখানেই চিকিৎসাধীন ছিল। হাসপাতালে তার সঙ্গে থাকতেন মা।
সোমবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে তিনি শৌচাগারে যান। এরপর ফিরে এসে ছেলেকে শয্যায় পাননি। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি বিষয়টি অবহিত করলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়। এতে দেখা যায়, হাসপাতাল থেকে একাই বের হয়ে যাচ্ছে নাবিদ।
এর কিছুক্ষণ পরই হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুরে শরীরে ব্যান্ডেজ লাগানো একজন দগ্ধ রোগীর মরদেহ ভেসে থাকার খবর আসে হাসপাতালে।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহম্মদ কোনো কথা বলতে চাননি।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আফরোজা নাজনীন এখন ভারতে অবস্থান করছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভারতে যাওয়ার আগে তিনি এই রোগী দেখেছিলেন। একটা অস্ত্রোপচারও করেছিলেন। সেই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছিল।
বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আফরোজা বলেন, আগুনে নাবিদের গলা, কাঁধ, বুক, মুখমণ্ডল, চোখের পাতা থেকে কান পর্যন্ত এবং শ্বাসনালি পুড়ে গিয়েছিল। তার শরীরের ১৬ শতাংশ পুড়ে গভীর ক্ষত হয়েছিল। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ার কারণে তার সেরে ওঠার সম্ভাবনা ছিল কম। তবে আমি আশাবাদী ছিলাম। বেঁচে থাকলে আরও কয়েকটা অস্ত্রোপচার লাগত। হাসপাতাল থেকে সব সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছিল।
মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক বলেন, পরিবারের ভাষ্যমতে ছেলেটার আত্মহত্যার প্রবণতা ছিল। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তার চিকিৎসাও চলছিল। হাসপাতাল থেকে সে একা বের হয়েছে, এটা সিসি ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে। তবে সে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে নাকি অন্য কিছু ঘটেছে তা পুলিশ নিশ্চিত নয়। এটা তদন্তের পর বলা যাবে।
ওসি জানান, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হবে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আরএইচ/এমবি