গোপালগঞ্জে আপন দুই ভাইয়ের মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরের বলি হতে হলো মা ও মেয়েকে। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, কৃষক টুকু মিনার স্ত্রী বিউটি বেগম (৩৮) ও এস.এস.সি পরীক্ষার্থী মেয়ে লামিয়া (১৬)। এ ঘটনায় আহত হয়েছে লামিয়ার ছোট বোন অন্তরা(১২)।
লামিয়া খালিয়া ইউনাইটেড একাডেমি থেকে এবছর (২০২৪ সালের) এস.এস.সি পরিক্ষায় অংশ নিচ্ছিলো।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হারুন মিনা ও টুকু মিনা আপন দুই ভাই। এরা সবাই কৃষি কজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বড় ভাই হারুন মিনার সাথে মেঝ ভাই টুকু মিনার বাড়ীর জমির সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিলো।
বিরোধীয় জায়গায় রবিবার সন্ধ্যার পর টুকু মিনার মেয়ে এস.এস.সি পরীক্ষার্থী লামিয়া বাড়ীর উঠানে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলো।
এসময় বড় চাচা হারুন মিনা লামিয়াকে ওই স্থান থেকে সরে যেতে বলে। এ নিয়ে চাচা ভাতিজির ঝগড়া-ঝাটি শুরু হয়। ঝগড়ার শব্দ শুনে লামিয়ার মা বিউটি বেগম ও ছোট বোন অন্তরা ঘটনাস্থলে আসে। মা ও দুই মেয়ের সাথে কথাকটাকাটির এক পর্যায়ে হারুন মিনা তার ঘরে থাকা দেশীয় অস্ত্র (কাতরা) দিয়ে প্রথমে লামিয়াকে ও পরে তার মা বিউটি বেগমকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করলে তারা দুইজনে মাটিতে লুটে পড়ে।
এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলে লামিয়া ও তার মায়ের মৃত্যু হয়। আরেক মেয়ে অন্তরা ঠেকাতে গেলে তার হাতে কোপ লাগে। মৃত্যুর বিষয়টি আচ করতে পেরে হারুন মিনা বাড়ি থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা রাত সাড়ে ৮টার দিকে হতাহতদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। আহত অন্তরাকে গোপালগঞ্জ ২৫ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোঃ আশরাফ হোসেন জানান, ঘটনার পর রোববার গভীর রাতে কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা এলাকা থেকে হারুন মীনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের পরপরই পালিয়ে যায় হারুন মীনা। সে কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা এলাকায় মধুমতি নদী পার হয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলো।
এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানার হেফাজতে পাঠানো হয়। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশীদ বলেন, এ ঘটনায় নিহত লামিয়ার বাবা টুকু মিনা বাদী হয়ে তিন জনকে আসামী করে সোমবার সকালে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত হারুন মিনা তার ভাতিজি ও ভাই বৌকে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি পুলিশের কছে স্বীকার করেছে। সোমবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ( ওসি) মোঃ আনিচুর রহমান বলেন, ঘটনার অল্প সময়ের মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ঘটনার সাথে অন্য যারা জড়িত তাদেরকের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তি অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে এলাকায় পুলিশ পাহারা রয়েছে।
এমএইচ/এমবি