For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

গোলাপের ভালো ফলনেও ছত্রাকের আক্রমণে হতাশ চাষিরা

Published : Tuesday, 13 February, 2024 at 11:46 AM Count : 330

সামনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ এই তিন দিবসকে ঘিরে সাভার উপজেলার গোলাপ গ্রামে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গোলাপের বাম্পার ফলন হলেও অজানা ছত্রাকের আক্রমণের কারণে চাষিদের দিন কাটছে সঙ্কায়।

ফাল্গুনের শুরুতে বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবসের আগে পঁচন রোগে গোলাপ গাছের ডাল, পাতা ও কুঁড়ি ঝরে পড়ছে। ফুল ফুটলেও ছত্রাকের আক্রমণে গোলাপ ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেসব ক্ষেতে গোলাপ ফুটেছে তার পরিমাণও কম। অতিমাত্রায় শীত, কুয়াশা ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে গোলাপ ক্ষেতের এই সর্বনাশ ঘটেছে বলে দাবি চাষিদের।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ বছর ২৩০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়েছে। ১৯৯০ সালে মিরপুর থেকে এসে বিরুলিয়ায় প্রথম গোলাপের চাষ শুরু করেন সাদেকুল নামের এক ব্যক্তি। তার বাণিজ্যিক ভাবে গোলাপ চাষ দেখে স্থানীয়রাও উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করেন গোলাপের চাষ। চাষিরা লাভবান হওয়ায় ইউনিয়নের মোইস্তাপাড়া, সামাইর, শ্যামপুর, সাদুল্লাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গোলাপ চাষ। এখানে মেরিন্ডা, হাজারি, লিংকন, পাপা মিলন, বধূয়া বা হলুদ ও সাদা গোলাপের চাষ হয়। তবে বাজারে চাহিদা বেশি লাল মেরিন্ডার। এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষেরই প্রধান জীবিকা ফুল চাষ।
সরেজমিনে বিরুলিয়া ইউনিয়নের গোলাপ গ্রামের ছোট কালিয়াকৈর, বাঘ্নীবাড়ী, মইস্তাপাড়া, কাকাবর, সামাইর, সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, আকরাইনসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গোলাপ বাগান। সাদা ক্যাপ মোড়ানো গোলাপের কুঁড়ি বাতাসে দুলছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর গোলাপের উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে ছত্রাকের কারণে অধিকাংশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গাছের পাতা, ডাল কিংবা কুঁড়ি পঁচে ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও মিলছে না সমাধান। অনেক গাছের শাখা-প্রশাখা লালচে হয়ে আবার কালো হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও গাছের পুরো অংশই কালো হয়ে গেছে। কলি এলেও ফুল না ফুটেই ঝরে যাচ্ছে।

কৃষকদের দাবি, কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েও কিংবা তাদের দেয়া পরামর্শে প্রতিকার মিলছে না। 

অধিকাংশ কৃষকের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে এসে কোনো পরামর্শ দেন না। 

শ্যামপুর গ্রামের আব্দুল খালেক চার বিঘা জমি গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ বছর গোলাপ গাছে পঁচা রোগ লেগেছে। গাছের পাতা, ডাল, কুঁড়ি পঁচে যাচ্ছে। বিভিন্ন রকমের ওষুধ দিয়েও আশানুরূপ কাজ হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে পরিদর্শন করেন। তবে তারা কোনো পরামর্শ কিংবা কোনো কিছুই বলেন না। এখানে এসে তারা মরা ফুল, পাতা নিয়ে চলে যান। 

তিনি আরও বলেন, কৃষি প্রধান এই দেশে সবকিছুরই গবেষণা করা হয়। কিন্তু গোলাপের উপর কোন গবেষণা নেই। লাখ লাখ টাকা খরচ করে গোলাপ ফুল চাষ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়। এই শিল্প থেকে শত শত মানুষের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু অত্যান্ত দু:খের সাথে বলতে হয় গোলাপ ফুলে ছত্রাক কিংবা নানা রোগের যখন আক্রমণ ঘটে তখন এই শিল্প রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এই শিল্প রক্ষা নিয়ে কোন গবেষণা করা হয় না বলে তিনি আক্ষেপ করেন।

তবে নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন বলেও জানান এই চাষী।  

আরেক ফুল চাষি মাসুদ রানার দাবি, লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ ফুলও তিনি তুলতে পারেননি। কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটার আগেই সব পঁচে গেছে। যেটুকু ফুল ফুটেছিল তাও রোগাক্রান্ত, ফলে কাংক্ষিত দাম পাননি।

তিনি বলেন , এবছর অজানা ছত্রাক রোগের কারণে ফুল উৎপাদন কম হয়েছে। কিন্তু খরচ হয়েছে বেশি। প্রথমে গাছের পাতায় কিছু কালো দাগ আসে। এরপর ধীরে ধীরে পাতা পড়ে কান্ডে পঁচন লাগে। তারপর ফুল ফোটার আগেই কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়।

অপর এক ফুল চাষি নাজিমুদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই বেচা-বিক্রি বেশি। তবে যতটুকু আমরা আশা করেছিলাম ততটুকু ফুল বিক্রি করতে পারছি না। গত কয়েক দিন আগেই প্রতিদিন ২০০ থে‌কে ৩০০টি ফুল তোলা গেছে। কিন্ত বর্তমানে ৫০টাও পাওয়া যায়না। ছত্রাকের কারণে কুঁড়ি থেকে ফুল ফোঁটার আগেই সব পঁচে গেছে। এতে চাহিদা থাকলেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। এখন শঙ্কা কাজ করছে। 

সাভার উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, সাভার উপজেলায় এবার ২৩০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়েছে। এ বছর প্রায় ৪০ কোটি ফুল বিক্রি হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চাষিরা লাভবান হবে।

গোলাপে ছত্রাকের আক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত সেখানে পরিদর্শন করা হয়। চাষিদের সঙ্গে উঠান বৈঠক, বাগানের পাশে, ফুল বাজারের পাশে ফেস্টুন সহ নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া ছত্রাকের আক্রমণ ঘটলে কি ওষুধ প্রয়োগ করা হবে তার ব্যবস্থাপত্রও দেয়া হয় কৃষি অফিসের পিক্ষ থেকে। 

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, গোলাপ গ্রাম, এটা একটা বিখ্যাত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সাভারে। এখানে কোনো কৃষক যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা সরকারকে অবগত করলে সরকার থেকে সহযোগিতা পেতে পারি। আর প্রোডাকশন যদি ফল করে তাহলে আমাদের কৃষি কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানাবো যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

-এআই/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,