প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) অধীনে বিএসসি ইন নার্সিং, বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং (পোস্ট বেসিক) এবং বিএসসি ইন মিডওয়াইফারি (পোস্ট বেসিক) প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
একইসঙ্গে এ ঘটনায় অভিযুক্ত বগুড়া নার্সিং কলেজের তিন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তেও উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামেবির অধীনে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ৮৩টি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর বিএসসি ইন নার্সিং, বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং (পোস্ট বেসিক) এবং বিএসসি ইন মিডওয়াইফারি (পোস্ট বেসিক) প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা। গত রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে একযোগে তিন বিভাগের ২১টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগে বগুড়া নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজে কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অডিও ফোন কল ফাঁস হয়। ওই অডিওতে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ এনে কলেজের কিছু শিক্ষক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে জানান। অভিযোগটি আমলে নেয় অধিদপ্তর। এরপরই সকল পরীক্ষা স্থগিতে রামেবি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় তারা।
অধিদপ্তরের নির্দেশে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হাবিব স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রামেবির অধিভুক্ত নার্সিং কলেজসমূহে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিতব্য সকল বিএসসি ইন নার্সিং, বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং (পোস্ট বেসিক) এবং বিএসসি ইন মিডওয়াইফারি (পোস্ট বেসিক) প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা (নতুন ও পুরাতন) -২০২২ পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।’
এদিকে, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) মুহাম্মদ শাখীর আহম্মদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বগুড়া নার্সিং কলেজের প্রভাষক মুসতা-নূর-সুলতানা, প্রভাষক গুলনাহার খাতুন ও সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল বারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) মুহাম্মদ শাখীর আহম্মদ চৌধুরী বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের ঘটনায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওইদিনই ছিল আমার শেষ অফিস। আমি এখন আর ওই দায়িত্বে নেই। কাজেই পরবর্তীতে কী ঘটেছে আর জানা নেই।
এ বিষয়ে বগুড়া নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ আরশে আরা বেগম জানান, তিন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি আমরা ওয়বসাইটে দেখেছি। অধিদপ্তর থেকে আলাদা করে কিছু জানানো হয়নি। আর তদন্ত কমিটির ব্যাপারেও আমাদের কিছু বলা হয়নি।
জানা গেছে, রামেবির প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, নার্সিং কাউন্সিল এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে। তবে এই কমিটি এখনও সরেজমিন পরিদর্শন বা রামেবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দাপ্তরিক যোগাযোগ করেনি।
জানতে চাইলে রামেবির উপাচার্য অধ্যাপক এজেডএম মোশতাক হোসেন জানান, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করা হবে।
এফএ/এসআর