For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাজশাহী কলেজে ৬০ বছরের পুরনো টেলিস্কোপ

Published : Sunday, 4 February, 2024 at 6:28 PM Count : 155



পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরের কক্ষপথ বিশেষ করে চন্দ্র ও গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে মানুষের আগ্রহ বহু পুরনো। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী তো বটেই বিজ্ঞানমনস্ক যে কারোরই মনে ভাবনার সৃষ্টি করে সৌরজগৎ সম্পর্কিত আলোচনা। আর পৃথিবী থেকেই যদি নিজ চোখে দেখা যায় মহাকাশের, তবে পুস্তকের পাঠকে পূর্ণতা দেয় বাস্তবিক জ্ঞান।

তেমনিভাবে লাল-সাদা দালানের রাজশাহী কলেজ থেকেই দেখা মিলতো মহাজাগতিক গ্রহ-নক্ষত্রের। কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দুইটি টেলিস্কোপ দিয়ে সৌরজগতের বিভিন্ন কক্ষপথ প্রত্যক্ষ করতো শিক্ষার্থীরা। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিজ্ঞান চিন্তায় আগ্রহী নানা বয়সী লোকের কাছে জনপ্রিয় ছিল এই টেলিস্কোপ।
তবে প্রায় দুই দশক ধরে কার্যত অকেজো হয়ে আছে জ্যোতির্বিদ্যার অন্যতম অনুসঙ্গ টেলিস্কোপ। যন্ত্র দুটির পৃথক লেন্স হারিয়ে যাওয়ায় কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। জার্মানির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই জাতীয় টেলিস্কোপ তৈরি বন্ধ রাখায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও পাওয়া দুষ্কর বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী কলেজের পদার্থ ল্যাবে টেলিস্কোপ দুইটি আছে। বিরাট আকৃতির টেলিস্কোপগুলোর একটির দৈর্ঘ্য ৫ মিটার, অপরটির সাড়ে ৪ মিটার। ১৯৬০ কিংবা সত্তরের দশকে কলেজ প্রশাসন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে এই টেলিস্কোপের ব্যবহার শুরু করে। কলেজের শিক্ষার্থীদের বাইরেও টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র দেখার ব্যবস্থা করা হতো সর্বসাধারণের জন্য।

কথিত আছে, সে সময় রাজশাহী কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাদ থেকে টেলিস্কোপের মাধ্যমে ভারতের বহরমপুর এলাকাও দৃষ্টিগোচর হতো। তবে বর্তমানে লেন্স জটিলতার কারণে অকেজো হয়ে পড়ে আছে যন্ত্র দুটি। প্রয়োজন থাকলেও সম্ভব হচ্ছে না নিজ চোখে মহাজাগতিক ঘটনা কিংবা গ্রহ-নক্ষত্র দেখার।

এ বিষয়ে কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলাউদ্দিন বলেন, এক সময় প্রয়োজন সাপেক্ষে কলেজের শিক্ষার্থীরা এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করত। পাশাপাশি এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষও এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিভিন্ন মহাজাগতিক ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করত।

তিনি আরও বলেন, এখনও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আসলে এই টেলিস্কোপের খোঁজ নেন, দেখতে চান। এগুলো এখন এন্টিক হিসেবে আছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এগুলোর যে ব্যবহার, মহাকাশের বিভিন্ন উপগ্রহ বিশেষ করে চাঁদ এবং শনি দেখা যেত, সেগুলো আর দেখানো যায় না। এই টেলিস্কোপ দুটো জার্মানির বিশ্ব বিখ্যাত কার্ল জেস অপটিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট কোম্পানির তৈরি। ওই কোম্পানি এখন রিফ্রাক্টিং টেলিস্কোপ বাজারে দিচ্ছে না বলে লেন্সগুলো পাচ্ছি না।

তবে বড় টেলিস্কোপের অবজেক্টিভ লেন্স ঠিক আছে কিন্তু তার আই পিসের লেন্সগুলো অনেক খোঁজাখুজির পরও ল্যাবে পাওয়া যায়নি। যে কারণে ৫ মিটার দৈর্ঘ্যের টেলিস্কোপটা ব্যবহার করা যায় না। আর অন্যটার অবজেক্টিভ লেন্স অচল হয়ে আছে, যে কারণে বড় বড় এই দুটো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারছি না। লেন্স পুনঃস্থাপন করে আবার যেন টেলিস্কোপ দুটো ব্যবহার করা যায় সেই চেষ্টা করছি। পাশাপাশি কলেজ প্রশাসনের মাধ্যমে রিপ্লেস বা অন্তত একটা টেলিস্কোপ সচল করা যায় সেই প্রচেষ্টা আমাদের আছে। বর্তমান প্রশাসন এই ব্যাপারে শিগগিরই সফল উদ্যোগ নেবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই সহযোগী অধ্যাপক।

অকেজো হয়ে পড়ে থাকা টেলিস্কোপ দিয়েই প্রায় দুই দশক আগে ধূমকেতু দেখেছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগের অফিস সহায়ক ফারুক হোসেন।

তিনি বলেন, তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান মোকছেদ হোসেন স্যারের সময় উনি বলছিলেন যে এখানে ধূমকেতু দেখা যাচ্ছে। থার্ড ইয়ারের কিছু ছাত্রকে নিয়ে আমরা এটা ছাদে সেট করি। টেলিস্কোপে দেখি যে সুন্দরভাবেই দেখা যায়। তো ধূমকেতুকে বেশ বড় দেখা যায় টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এমনিতে তো তারার মতো বা বড় তারা মনে হয়, কিন্তু টেলিস্কোপে অনেক বড় দেখা যায়। ওর আশপাশে কোনটা কত দূরত্বে আছে এগুলোও দেখা যাচ্ছিল, খুব সুন্দর লাগছিল।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওলিউর রহমান বাবু বলেন, রাজশাহী কলেজ তো ঐতিহ্যবাহী একটি কলেজ। এখানে অনেক পুরাতন কিছু জিনিস আছে যেগুলো আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য হলেও সংরক্ষণ করা উচিত। তারমধ্যে একটি এই টেলিস্কোপ। এটি একসময় শুধু রাজশাহী কেন সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি কথা ছিল যে রাজশাহী কলেজ থেকে ভারতীয় সীমান্তের ওই প্রান্তের শহরগুলো দেখা যায়। আমি তখন খুব ছোট্ট ছিলাম। এই যন্ত্র দিয়ে কি হয় সেটা আমিও দেখতে আসতাম।

তিনি আরও বলেন, এটা দিয়ে আমরা তারা-চাঁদ দেখেছি। মনে হতো যেন অন্য কোনো জগতে চলে গিয়েছি। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব এই জিনিসগুলো যেন সংগ্রহ করা হয়। বড়দের জন্য না হলেও ছোটদের জন্য একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে সে সময় কি হতো সেসব তুলে ধরা। আর যদি সম্ভব হয় তো এটা ঠিকঠাক করে তাদেরকে চাঁদ-তারা দেখানো।

কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আজমত আলী বলেন, বাবার কাছে শুনেছিলাম যে, রাজশাহী কলেজে ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে যে টেলিস্কোপ আছে, সেটি দিয়ে চাঁদের গহ্বর বা গর্তগুলো দেখা যেত। এই টেলিস্কোপটি অনেক পুরনো হওয়ার কারণে কিছু যন্ত্রপাতির অভাব আছে। রাজশাহী শহর তো বটেই পুরো দেশেই কলেজ পর্যায়ে বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হয়ত এতো বড় টেলিস্কোপ নেই। রাজশাহীর মানুষদের বিজ্ঞানমনস্ক করতে এ রকম টেলিস্কোপ রাজশাহী কলেজের নতুন করে কেনা উচিত। এতে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শহরের অধিবাসীরা টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র দেখার সুযোগ পাবে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, পদার্থবিজ্ঞানে জোতির্বিদ্যা বা মহাকাশ নিয়ে আমাদের পড়াশোনা করতে হয়। এক্ষেত্রে একটা টেলিস্কোপ খুবই দরকার। রাজশাহী কলেজের মতো অনেক প্রসিদ্ধ একটা কলেজে টেলিস্কোপ আছে, কিন্তু আমরা এর ব্যবহার করতে পারি না। অনেক সময় চন্দ্রগ্রহণ হয় এগুলো আমরা দেখতে পারি না। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ হিসেবে একটা ভালো টেলিস্কোপ থাকা খুবই দরকার। কলেজ প্রশাসনের কাছে আবেদন করব যেন আমাদের বিভাগের জন্য একটা সুন্দর টেলিস্কোপের ব্যবস্থা করে দেন।

টেলিস্কোপ সচল না থাকায় শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে একমত রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেকও। তিনি বলেন, যে যন্ত্রাংশগুলোর জন্য অকেজো হয়ে আছে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। কিন্তু যে কোম্পানি লেন্স দুটো তৈরি করেছে তারা আর এই টেলিস্কোপ বাজারে দিচ্ছে না। তাই চালু করতে অসুবিধা হচ্ছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে নতুন একটা টেলিস্কোপ কিনে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান অধ্যক্ষ।

এফএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,