বিরোধী দল হওয়ার ব্যাপারে এখনো চিঠি পাইনি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ।সোমবার দুপুর ৩টায় রংপুর মহানগরীর পৈত্রিক নিবাস স্কাইভিউতে এ মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি ‘দল হিসেবে সর্বোচ্চ আসন পাওয়ায় জাতীয় পার্টি দ্বিতীয় বিরোধী দল হচ্ছে’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই মন্তব্যকে ‘স্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করেন।
এ সময় তার সাথে ছিলেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইয়াসির, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাফিউল ইসলাম শাফী, নির্বাহী সদস্য লোকমান হোসেন, জাহিদুল ইসলাম ও হাসানুজ্জামান নাজিমসহসহ নেতৃবৃন্দ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে জাতীয় পার্টিই বসবে, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যেরা স্বতন্ত্রই থাকবেন বলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য আমরা মনে করছি স্বাভাবিক হওয়ারই কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আমরা সেভাবে পাইনি। আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে তা নিয়মের কথাই বলা হয়েছে। সংসদে বিরোধী দলে থাকা সব থেকে বেশি আসন যাদের তারাই বিরোধী দল হওয়া কথা। সেখানে একটা গ্রুপের কথা আছে। সেটাও বিরোধী দলীয় গ্রুপের কথা বলা আছে। এখন যারা নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পরবর্তীতে শুধু জাতীয় পার্টিই আছে। বাকি যারা স্বতন্ত্র তারা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও সরাসরি আওয়ামী লীগের সদস্য। কাজেই তাদের বিরোধী দল হিসেবে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সেখানে দল হিসেবে যেকোনোভাবেই যাই বলা হোক বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সেখানে আমরাই আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অফিসিয়ালি আমরাই বিরোধী দল হওয়ার কথা।
তিনি আরো বলেন, উনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন আমি মনে করি এটা স্বাভাবিক কথা বলেছেন। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সরকার কিংবা সংসদের তরফ থেকে আমরা পাইনি। আমরা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব এই ঘোষণা আসুক বা না আসুক। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। এটা আমরা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছি।’
জি এম কাদের বলেন, ‘গত সংসদেও আমরা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছি। জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা জনগণের পক্ষে কথা বলেছি। সরকারের সমালোচনা করেছি, যেখানে দরকার। সরকারের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম, দলীয়করণ, ইত্যাদি কথা আমরা সংসদে বিভিন্ন সময় তুলে ধরেছি। যেসব আইন এসেছে, তাতেও ভূমিকা রেখেছি। সরকারের সমালোচনা যেভাবে করা দরকার, সেভাবে করেছি। যেখানে পরিবর্তন দরকার সেগুলো তুলে ধরেছি এই ভূমিকা। আগামীতেও রাখব বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জি এম কাদের বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি হলো আমাদের দেশের মানুষের সব চেয়ে বড় কষ্ট যেটা দাড়িয়েছে সেটা হলো দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি। লাগামহীনভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। মানুষের আয় কমছে। কারণ মুদ্রার মান কমছে। প্রতিদিন ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকা দুর্বল হচ্ছে, আবার অন্যদিকে মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে সার্বিকভাবে দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা ভালো নয়। আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তারা বলতে গেলে নাভিশ্বাস অবস্থায় আছে। দিন চালাতে তাদের খুব কষ্ট হচ্চে। মানুষের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর থেকে উত্তরণ মানুষ আশা করে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া এই ক্ষোভ প্রশমনের উপায় আমি দেখি না। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এই নির্বাচনের মাধ্যমে আসবে কিনা। এখন পর্যন্ত আমরা এটা নিশ্চিত হতে পারিনি। সামনের দিকে সরকারের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ-দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা, সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে উন্নতি করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।’
নির্বাচনের পর প্রথম বারের মতো গত ২০ জানুয়ারি রংপুর সফরে আসেন জি এম কাদের। নেতাকর্মী ও প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় ছাড়াও বিভিন্নস্তরের মানুষের সাথে বৈঠক করছেন তিনি।
এমবি
